মহান নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষের সূচনা ও বাসদ (মার্কসবাদী)’র ৩৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জনসভা ও র্যালী অনুষ্ঠিত
মহান নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষের সূচনা ও বাসদ (মার্কসবাদী)-র ৩৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১৮ নভেম্বর বিকাল ৩ টায় নগরীর বটতলী রেলস্টেশন চত্ত্বরে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মানস নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী। সভা পরিচালনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব কমরেড অপু দাশগুপ্ত।
কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ আজ থেকে ৯৯ বছর আগে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ার বুকে কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে মহান নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। নভেম্বর বিপ্লব প্রমান করেছিল, সমাজবিকাশের ধারাবাহিকতায় সমাজতন্ত্রেই কেবল শোষণমুক্তি হতে পারে। মহান লেনিনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত সেই রাষ্ট্র এক নতুন সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলো, দেখিয়েছিল মানুষর উপর শোষণ কোন চিরস্থায়ী ব্যাপার নয়। সমাজতান্ত্রিক সেই রাষ্ট্র পুঁজিবাদী শোষণ-বৈষম্য-অসাম্যের অবসান ঘটিয়ে শ্রমজীবী মানুষের সর্বাঙ্গীন বিকাশের পথ খুলে দিয়েছিলো। ইউরোপ-আমেরিকার যেকোন পুঁজিবাদী দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়া সেই দেশ বিপ্লবের অল্প কয়েক বছরের মধ্যে ঘোষণা করতে পেরেছিলো এ দেশে কোন বেকার-ভিক্ষুক-পতিতা-অভূক্ত নেই। রাষ্ট্রের উদ্যোগে সকলের জন্য শিক্ষা-চিকিৎসা-কাজের ব্যবস্থা করেছিলো। নতুন এই সভ্যতার অভ্যূদয়কে রবীন্দ্রনাথ, রম্যা রঁল্যা, আইনস্টাইন প্রমুখ মনীষীরা অবাক বিস্ময়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন। সমাজতন্ত্রের আদর্শে বলীয়ান রাশিয়ার জনগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবল পরাক্রমশালী হিটলার বাহিনীকে অকুতোভয় সাহসে রুখে দিয়েছিলো। দেশে দেশে ঔপনিবেশিক শোষণবিরোধী মুক্তিসংগ্রামে প্রেরণা সঞ্চার করেছিলো। কিন্তু সোভিয়েত সমাজতন্ত্রকে সাম্যবাদের লক্ষ্যপথে সঠিক নিয়মে পরিচালিত করতে না পারায়, কেবল সোভিয়েতেরই পতন ঘটেনি, মানবসভ্যতা আজ সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের আগ্রাসনের কাছে অসহায়, অরক্ষিত। মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা দুনিয়াজুড়ে সাম্রাজ্যবাদের রক্তাক্ত নখরে মানবসভ্যতা আজ ভূলুণ্ঠিত। সারাবিশ্বে বৈষম্য আজ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একদিকে ১% শোষক, অন্যদিকে ৯৯% শোষিত জনগণ। মুক্তির জন্য শোষিত জনগণ বারবার বিক্ষোভে বিদ্রোহে ফেটে পড়ছে। তাই সমাজতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে পুঁজিবাদ-সা¤্রাজ্যবাদের অনিবার্য শোষণ থেকে মুক্তির জন্য সঠিক বামপন্থী দলের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেদিয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এতবড় সংগ্রামের পরও কাঙ্খিত মুক্তি আসেনি। বরং ৪৫ বছরে এক দুবৃত্তায়িত রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরী হয়েছে, যেখানে লুটপাট দূর্নীতি প্রথম ও শেষ কথা। শাসক দলগুলো ক্ষমতার স্বার্থে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হয়নি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাথে আপোষ সমযোতার প্রচারনায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার এমন এক পরিবেশের জন্ম দিয়েছে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে সম্প্রীতি হারিয়েযাচ্ছে। বাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িতে হামলা চালানোর ঘটনায় স্পষ্টভাবেই বোধ্যগম্য সরকার দলীয় এমপি ও প্রশাসনের ছত্রছায়াতেই এধরনের ঘটনা ঘটতে পেরেছে। এর আগেও সাম্প্রদায়িক সমস্ত ঘটনায় সরকারী মদদ ছিল। গণতন্ত্র মানে তো জনগণের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা। কিন্তু আওয়ামী-মহাজোট শাসনে এসব আজ কথার কথা। তা নইলে রামপালে সুন্দরবন বিনাশী বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে যেখানে গোটা দেশ সোচ্চার, সরকার উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের বুলি আউড়ে গায়ের জোরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে। জনবিরোধী এ সকল চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের সচেতন ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম আজ সময়ের দাবি।”
জনসভার শুরুতে লাল পতাকায় সুসজ্জিত র্যালী ও শেষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালনায় নাটক ‘মৃত্যুফাঁদ’ অনুষ্ঠিত হয়।