Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদশ্রমিকের অধিকার আদায়ে ও মালিকশ্রেণীর শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন

শ্রমিকের অধিকার আদায়ে ও মালিকশ্রেণীর শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন

11667500_898962930175717_2642907448188147163_n১০  জুলাই ২০১৫ বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার অংশ হিসেবে সারাদেশে প্রতিষ্ঠাবাষর্িকীতে সারাদেশে শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ঢাকায় ওই দিন বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সফল করে তোলার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রচার পত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে শ্রমজীবী মানুষের অবদানে। কৃষি-শিল্প-সেবা ক্ষেত্রে শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে জাতীয় উৎপাদন বেড়ে চলেছে। কিন্তু বিনিময়ে মানুষের মত বাঁচার অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। নিম্ন মজুরী, বেকারত্ব, ক্ষুধা, অভাব, ছাঁটাই, নির্যাতন তাদের নিত্যসঙ্গী। ঘাড়ের ওপর চেপে আছে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। বিগত ৪৪ বছর মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু রেখে ষ্টীলমিল, আদমজী পাটকল, চিনিকলসহ ছোট বড় রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক কারখানা বন্ধ করে কোটি কোটি শ্রমিককে বেকার বানানো হয়েছে। এর বিপরীতে সস্তা শ্রম কাজে লাগিয়ে গড়ে ওঠা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস এখন প্রধান শিল্পখাত। গার্মেন্টস শ্রমিকরা স্বল্প মজুরী আর দৈনিক ১২/১৪ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রমের শিকার। বারবার আন্দোলনে নেমেও তাদের কপালে জুটেনি বাঁচার মত মজুরি। মজুরির দাবিতে, ছাঁটাই-নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে নামলে তাদের সন্ত্রাসী-ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়। চা শ্রমিকদের বর্তমান দৈনিক মজুরি ৬৯ টাকা। হোটেল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত চুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশের তুলনায় দুর্বল অর্থনীতির দেশ কম্বোডিয়াসহ পাকিস্তান, শ্রীলকা, ভারত, চীন, ভিয়েতনামে ন্যূনতম মজুরি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।
বছর বছর বাসা ভাড়া, শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহন খরচ বাড়ছে — এই রকম অবস্থায় নামমাত্র মজুরি দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে একজন শ্রমিক কিভাবে জীবন যাপন করবে? পরিবহন, হোটেল, রিক্সা-ভ্যান চালক, হকার, প্রেস কর্মচারী, নির্মাণ, স্বর্ণ কারিগর, দোকান কর্মচারিসহ শ্রমজীবি মানুষ এ দুর্মূল্যের বাজারে কীভাবে বেঁচে আছে তার খবর সরকার রাখে না। প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, মালিকদের জন্য কর ছাড় – ট্যাক্স হলিডেসহ নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কোন বরাদ্দ নেই।

আইএলও কনভেনশন এবং বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিকের সংগঠিত হওয়া ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার স্বীকৃত হলেও ৪০ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকদের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। ইপিজেডের শ্রমিকের জন্য এ অধিকার আইনত নিষিদ্ধ। ফলে গণতান্ত্রিক উপায়ে শ্রমিকরা তাদের কথা তুলে ধরতে না পারায় ছাঁটাই, শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুরাহা হয় না। স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ-ভাঙচুর হয়, মালিকপক্ষ-প্রশাসন এর সুবিধা নেয়। গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবি এখনো উপেক্ষিত। দুইবার সংশোধন করে শ্রম আইনে শ্রমিকের অধিকার খর্ব করে মালিক পক্ষের স্বার্থরক্ষাকারী দলিলে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমানে শ্রম আইনে মালিককে সামান্য অজুহাতে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ৫ ভাগ লভ্যাংশ শ্রমিকদের পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। কঠিন করে দেয়া হয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার।

নীতি আদর্শের ভিত্তিতে লড়াই করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রচারপত্রে বলা হয়, পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা শ্রমজীবী মানুষকে আজ মানবেতর জীবনে ঠেলে দিচ্ছে। শ্রমিকের শ্রমে তৈরি হওয়া মূল্যের বড় অংশ আত্মসাৎ করে মুনাফার পাহাড় গড়ছে মালিক শ্রেণি। এ ব্যবস্থা উচ্ছেদের লক্ষ্যে শ্রমিক আন্দোলনকে পরিচালিত না করে কেবল অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া ভিত্তিক লড়াই চূড়ান্ত সমাধান দেবে না। অন্যদিকে মালিকদের বিরুদ্ধে লড়ালড়ির অভিনয় করে দালাল শ্রমিক নেতৃত্বের ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়, শ্রমিক দরদী সেজে এনজিওদের যুক্ত করে শ্রমিকদের সচেতন করার মিথ্যা প্রয়াস — এই হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি।

নীতি আদর্শহীন সংগঠন ও নেতৃত্ব দিয়ে শ্রমিক আন্দোলন পথ পাবে না। যতদিন এই পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল আছে ততদিন শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিদিনের ন্যায্য দাবিতে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম গড়ে তোলা অর্থাৎ কাজের নিশ্চয়তা, ন্যায্য মজুরী, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের জন্য আমাদের লড়তে হবে। পাশাপাশি মালিকী ব্যবস্থা উচ্ছেদের লক্ষ্যে বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আহ্বান নিয়ে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে সংগঠনের এ সংগ্রামে সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়।

বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ডাক—

  • জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা কর।
  • ইপিজেড, গার্মেন্টসসহ সকল শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত কর।
  • কর্মস্থলে নিরাপত্তা দিতে হবে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
  • সামরিক বাহিনীর রেটে শ্রমিকদের রেশন দিতে হবে। আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষায় সকল দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
  • বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ কর। শ্রমিক নির্যাতন, ছাঁটাই, লে-অফ, লক আউট বন্ধ কর।
  • চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে অবিলম্বে নতুন চুক্তি সম্পাদন কর।
  • গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন কর।
RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments