বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশ কেন্দ্র ঘোষিত ‘দাবি দিবস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ৪ মার্চ শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে শ্রমিকদের নিম্নতম মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা, শ্রম আইন ও বিধিমালার শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা সংশোধন এবং ইপিজেড-এসইজেডসহ সর্বত্র অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের দাবি জানানো হয়। পরে একটি মিছিল পল্টন এলাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার সংগঠক ফখরুদ্দিন কবির আতিক, আফসানা বেগম লুনা, রাজু আহমেদ, রাজীব চক্রবর্তী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সরকার দাবি করছে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, অচিরেই ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হতে যাচ্ছে, তাহলে শ্রমিকের অবস্থার উন্নতি হবে না কেন? সরকারি কর্মচারী-মন্ত্রী-এমপি-প্রধনমন্ত্রী-সেনাবাহিনী-পুলিশ সবার বেতন বাড়লে, শ্রমিকদের মজুরি কেন বাড়বে না? শ্রমিকরাও তো একই বাজার থেকে কেনা কাটা করে। দেশে জাতীয় আয় বাড়ার পেছনে শ্রমজীবী মানুষের অবদানই তো সবচেয়ে বেশি। অর্থনীতির উন্নতির জন্য শ্রমিকদের মানবেতর জীবনে ফেলে রাখা হবে তা মেনে নেয়া যায় না। তাই আজ দাবি উঠেছে, শ্রমিকদের মানুষের মত বাঁচার উপযোগি জাতীয় ন্যূনতম মজুরি সরকারি ভাবে নির্ধারণ ও ঘোষণা করতে হবে। শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ন্যূনতম মজুরি ১৬হাজার টাকার দাবি জানিয়েছে। কারণ, সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন মোট বেতন দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা [বেসিক ৮,২৫০ টাকা +৬৫% বাড়িভাড়া ৫,৩৬২ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০+ যাতায়াত ৩০০ টাকা+ দুই সন্তানের জন্য শিক্ষা ভাতা ১,৫০০টাকা + টিফিন ভাতা ৩০০ + ধোলাই ভাতা ১৫০]। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের মাপকাঠিতে দারিদ্রসীমার উপরে উঠতে মাথাপিছু দৈনিক অন্ততঃ ২ ডালর আয় দরকার। অর্থ্যাৎ ৪সদস্যের একটি পরিবারে মাসে অন্ততঃ ১৯,২০০ টাকা আয় থাকলে তাকে দারিদ্রসীমার উপরে বলা যায়। এসব কিছু বিবেচনায় আমরা সর্বনিম্ন মোট মজুরি ১৬হাজার টাকার দাবি তুলেছি।”
বক্তারা আরো বলেন, “শ্রম বিধিমালা ২০১৫- এ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারে বাধা রয়ে গেছে। কারখানার মোট শ্রমিকের ৩০শতাংশ সদস্য নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং ট্রেড ইউনিয়নের অনুপস্থিতিতে ক্ষমতাহীন মালিক- শ্রমিক সহযোগিতা কমিটি, স্থায়ী শ্রমিক ছাড়া কারও ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হতে না পারার বিধান রেখে ইউনিয়ন গঠন কঠিন করে রাখা হয়েছে। নতুন নিয়ন অনুযায়ী ৮২টি শর্ত পূরণ করে ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে শ্রমিকদের। এমনকি দাবি দাওয়া আদায়ে শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকারকেও মালিক ও সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ রেখে কর্যত অসম্ভব করে তোলা হয়েছে । ‘অসদাচাণে’র জন্য বরখাস্ত হলে শ্রমিক কোন ক্ষতিপূরণ পাবে না। দেশের অর্ধ-কোটি এ্যাপারলেস ও লেদার শ্রমিক ৫ শতাংশ লাভ থেকে বঞ্চিত হবে। সুপারভাইজরদের হাতে শ্রমিকদের কর্মচ্যুত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। মালিক পক্ষ ঠিকাদারদের মাধ্যমে স্থায়ী ভাবে কর্মী নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। ফলে, এই শ্রম বিধিমালা শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী ও অগণতান্ত্রিক।”
নেতৃবৃন্দ মনুষ্যোচিত মজুরি ১৬ হাজার টাকা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন -বিধিমালা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ ও সরকারি দায়িত্বে রেশন-বাসস্থান –চিকিৎসা- পেনশনসহ সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।