বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এর ২য় কেন্দ্রীয় শিক্ষা শিবির ২৭ ও ২৮ মে দুইদিনব্যাপী তোপখানা রোডস্থ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তন ও সংগঠন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদেশ থেকে শ্রমিক ফেডারেশনের নির্ধারিত সংগঠকরা এই শিক্ষাশিবিরে অংশগ্রহণ করছেন। শিক্ষাশিবিরের আলোচ্য বিষয় ছিল — ‘সর্বহারা রুচি-সংস্কৃতি শ্রমিকদের কাছে নিয়ে যেতে হবে’ শীর্ষক কমরেড শিবদাস ঘোষের বক্তব্য, শ্রমনীতি ও ন্যূনতম জাতীয় মজুরি প্রসঙ্গে এবং সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা ও সমস্যাদি। দেশের বিভিন্ন জেলার সংগঠকরা এসব বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষাশিবিরের শুরুতে সংগঠনের নেতা কমরেড বোধিসত্ব চাকমার আকস্মিক অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। শিক্ষাশিবিরে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জহিরুল ইসলাম, পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল রায়। শিক্ষাশিবিরের সমাপনী সেশনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতি ও শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠকদের করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। এছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড্স মানস নন্দী, মঞ্জুরা নীলা, ফখরুদ্দিন কবির আতিক।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সমাজের সকল মানুষের শ্রমে উৎপন্ন সম্পদ ব্যক্তিমালিকানার জোরে অল্প কিছু মালিক আতœসাৎ করছে। এই অন্যায় ব্যবস্থাকে রক্ষা করছে মালিকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকারী রাষ্ট্র এবং তাদের পলিটিক্যাল ম্যানেজার বুর্জোয়া দলগুলো। মার্কসবাদ দেখিয়েছে — ব্যক্তি মালিকানা উচ্ছেদ করে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার মধ্যেই শ্রমিক শ্রেণী শোষণ থেকে চূড়ান্ত মুক্তি অর্জন করবে। তাই, অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সমাজের আমূল পরিবর্তনের চেতনা নিয়ে যেতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “মার্কসবাদ শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির তত্ত্ব নয়, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সকল দিক ব্যাপ্ত করে সমাজকে পাল্টানোর দর্শন। এই সংগ্রামে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে বিপ্লবী আদর্শের সংস্পর্শে এসে যে চারিত্রিক সৌন্দর্য্য সৃষ্টি হয় তা মানুষকে আকৃষ্ট করবে। বিপ্লবী আদর্শ, চেতনা ও সংস্কৃতির জোরেই প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের এগোতে হবে।”
শিক্ষাশিবির থেকে শ্রমিকদের নিম্নতম মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা, শ্রম আইন ও বিধিমালার শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা সংশোধন, ইপিজেড-এসইজেডসহ সর্বত্র অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের জন্য সরকারি দায়িত্বে রেশন-বাসস্থান-চিকিৎসা-পেনশনসহ সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এবং অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি রাজনীতি সচেতন বিপ্লবী ধারার শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
আগামী ১৭ জুন সকল শ্রমিককে ঈদ বোনাস দেয়ার দাবিতে দাবি দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।