Saturday, November 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - আগষ্ট ২০১৯সমাজতন্ত্র : কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক

সমাজতন্ত্র : কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক

​কথা এখন প্রায় সকলেই স্বীকার করেন যে, সমাজের বর্তমান কাঠামোটা আজকের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াদেরই সৃষ্টি। বুর্জোয়াশ্রেণীর যে বিশেষ উৎপাদনপদ্ধতি, যা মার্কসের সময় থেকে পুঁজিবাদী উৎপাদনপদ্ধতি বলে পরিচিত, তা সামন্তী ব্যবস্থার সাথে অর্থাৎ সামন্তী ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তিবিশেষ, একটা সমগ্র সামাজিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় সংস্থা যেসব বিশেষ সুবিধা পেয়ে এসেছে, তার সাথে এবং  বংশগত সম্পর্কের অধীনস্ত যে সামন্ততান্ত্রিক সামাজিক কাঠামো, তার সাথে (সেই পুঁজিবাদী উৎপাদনপদ্ধতি) খাপ খাচ্ছিল না। বুর্জোয়াশ্রেণী সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙেছে এবং তার ধ্বংসস্তুপের উপর গড়ে তুলেছে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা – যে সমাজব্যবস্থা হচ্ছে অবাধ প্রতিযোগিতার রাজত্ব, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আইনের চোখে সমানাধিকারের রাজত্ব, সমস্ত পণ্যমালিক ও পুঁজিবাদের আশীর্বাদপুষ্ট বাকি সকলের রাজত্ব। এরপর থেকেই পুঁজিবাদী উৎপাদনপদ্ধতি স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে পারল। বাষ্প, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্র তৈরির যন্ত্র যখন থেকে পুরনো ধরনের কারখানাকে আধুনিক শিল্পে রূপান্তরিত করে দিল, তখন থেকে বুর্জোয়াশ্রেণীর পরিচালনায় উৎপাদন শক্তি এমন দ্রুততায় ও এমন মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কথা আগে কেউ কখনো শোনেনি। কিন্তু পুঁজিবাদের বিকাশের সময় যেমন তার প্রভাবে পুরনো ধরনের উৎপাদন ও হস্তশিল্প আরো বিকশিত হয়ে গিল্ডের সামন্তী শৃঙ্খলের সাথে সংঘাতে এসেছিল, ঠিক তেমনি আজকের আধুনিক শিল্পও তার আরো পরিপূর্ণ বিকাশের পর্যায়ে, সংঘাতে আসছে সেইসব সীমার সঙ্গে, যে সীমার মধ্যে পুঁজিবাদী উৎপাদনপদ্ধতি তাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। নয়া উৎপাদিকা শক্তি ইতিমধ্যেই উৎপাদনশক্তিকে ব্যবহার করার পুঁজিবাদী পদ্ধতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এবং উৎপাদিকা শক্তির সাথে উৎপাদনপদ্ধতির এই যে বিরোধ তা মানুষের মনের কল্পনায় সৃষ্ট আদিম পাপ ও স্বর্গীয় ন্যায়ের মধ্যে বিরোধের মত কোনও বিরোধ নয়। আমাদের জানার বাইরে, এমনকী যারা এই সংঘাত সৃষ্টি করেছে, সেইসব মানুষদের অভিপ্রায় ও কর্ম নিরপেক্ষভাবেই, বাস্তব সত্য ঘটনা হিসাবে এই সংঘাত অবস্থান করছে। আধুনিক সমাজতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে চিন্তার ক্ষেত্রে এই বাস্তব সংঘাতেরই প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়; যে শ্রেণি এই সংঘাতে পীড়িত হচ্ছে, সর্বাগ্রে সেই শ্রমিকশ্রেণীর মননজগতে এই সংঘাতের আদর্শ প্রতিফলন হচ্ছে সমাজতন্ত্র।

[সংগৃহীত – সমাজতন্ত্র: কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস, বাংলা মুদ্রণ, ২৫ জুলাই ২০১৬, গণদাবী প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স প্রা. লি., কলকাতা, পৃষ্ঠা ৫২-৫৩]

সাম্যবাদ আগষ্ট ২০১৯

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments