উন্নয়ন বাজেটের ৪০% বরাদ্দ, ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু, ধান-সহ ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও বয়স্ক-অসহায় নারীদের মাসিক ৩০০০ টাকা ভাতা চালুর দাবি
সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এবং বাসদ (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে আজ ৭ মে ’১৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত কৃষক-ক্ষেতমজুর সমাবেশে কৃষি ও কৃষককে রক্ষার দাবিতে আসন্ন জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% প্রত্যক্ষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়। এছাড়া সমাবেশ থেকে বছরে ন্যূনতম ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু, ধান-ভূট্টাসহ ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, হাটে-বাজারে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, সকল বয়স্ক এবং অসহায় নারীদের মাসিক ৩০০০ টাকা ভাতা প্রদান, ক্ষেতমজুরদের সারাবছর কাজ, গ্রামীণ গরিব মানুষের জন্য আর্মি রেটে রেশন, ভূমিহীনদের খাসজমি প্রদান, সার-বীজ-কীটনাশক-ডিজেলের দাম কমানো, কৃষি উপকরণ বিএডিসি’র মাধ্যমে সরবরাহ, টিআর-কাবিখা-কর্মসৃজন-ভিজিএফ-ভিজিডিসহ সকল সরকারি সাহায্যের সংখ্যা, পরিমাণ, সময় বৃদ্ধি এবং অনিয়ম দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ ও সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার এবং সহজ শর্তে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ প্রদান ও এনজিও-মহাজনী সুদ আইন করে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়। এসকল দাবি বাস্তবায়নের জন্য সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে কৃষি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কৃষকনেতা আলমগীর হোসেন দুলাল, আহসানুল হাবিব সাঈদ ও মনজুর অলম মিঠু।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘পুঁজিবাদী শোষণ যত তীব্র হচ্ছে ততই এদের কৃষক-ক্ষেতমজুরদের জীবন-জীবিকাসহ কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, অসাধু ব্যাবসায়ী-রাজনীতিক চক্রের কবলে পড়ে কৃষক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আজ সর্বস্বান্ত। একই সাথে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির কাছে তাদের নির্ভরশীল করে তোলা হয়েছে। শোষণমূলক এ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হলে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের কৃষি-কৃষক এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আজ বহুমুখী সংকটে জর্জরিত। রাষ্ট্রীয়ভাবেও যে কৃষিখাতকে যথোপযুক্ত গুরুত্ব দেয়া হয় না, প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটে। একদিকে কৃষককে চড়া দামে সার-বীজ-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ কিনতে হয়, অপরদিকে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে হতে হয় বঞ্চিত। ফলে কৃষক একবার কিনতে ঠকে, আরেকবার বেচতে ঠকে। এভাবে ক্রমাগত সে সর্বস্বান্ত হয়। এছাড়া ভূমিহীন-ক্ষেতমজুরদের অবস্থা আরো নাজুক। সারাবছর কাজের কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী, দারিদ্র্যের কষাঘাতে তারা জর্জরিত। ভূমিহীন ক্ষেতমজুরের সারাবছরের কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানও রাষ্ট্রের জরুরি দায়িত্ব। এ জন্য ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান করার দাবি দীর্ঘ দিনের।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, চাল, ডাল, তেল-নুন-আদা, পিঁয়াজ-রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণের আয় বাড়ছে না, অথচ ব্যয় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। ফলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কাছে জনগণ জিম্মি। গ্রাম-শহরের দরিদ্র মানুষই মূল্যবৃদ্ধির কষাঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য নেতৃবৃন্দ, সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জোর দাবি জানান এবং সাথে সাথে কৃষক ও কৃষি এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার দাবিতে জনগণকে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে সংগঠনের সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম মিঠু, ওবায়দুল্লাহ মূসা, অধ্যাপক তরিকুল আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কৃষি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে।