Saturday, November 23, 2024
Homeছাত্র ফ্রন্টসমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার ৮ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার ৮ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষাব্যবসা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান

IMG_0158

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার ৮ম নগর সম্মেলন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বিকেল ৩ টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীত ও পতাকা উত্তোলনরে মাধ্যমে সম্মলেন উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রিয় সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা। সভাপতিত্ব করেন নগর সভাপতি তাজ নাহার রিপন। পরিচালনা করেন নগর সাধারণ সম্পাদক আরিফ মঈনুদ্দিন। আলোচনা করেন বিশিষ্ট অধ্যাপক ড.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী , কেন্দ্রিয় সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক কমরেড মানস নন্দী ।

অধ্যাপক ড.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ঢুকেছে। শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। আর এগুলো হচ্ছে একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে যার নাম পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদ বোঝে মুনাফা, মানুষ বোঝে না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা রাষ্ট্রে ফ্যাসীবাদ কায়েম করেছে। এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করার মধ্য দিছেন একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

IMG_0255ছাত্র নেতা নাঈমা খালেন মনিকা বলেন, “শিক্ষা আজ বড় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। স্কুল-শিক্ষক-বই শুধু নয়, শিক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রও আজ বাজারী পণ্যে পরিণত হয়েছে। একটি ফাটকা বাজারের যত রকমের উপকরণ থাকে,তার সবই রয়েছে এই প্রশ্ন ফাঁসের বাজারে। মহামারী আকার ধারণ করেছে প্রশ্ন ফাঁস। এমনকি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার খবর পত্রিকায় প্রকাশের পরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না শিক্ষামন্ত্রী ও সরকার। একটা অগণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় A+ পাওয়া হার বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি। একের পর এক পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর পরিবর্তে পরীক্ষার্থীতে পরিণত হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশেষ করে পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) শিশুদের মনে ভীতির সঞ্চার করছে। যা মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও মনস্তত্ত্ববিদরা। যেভাবেই হোক ভালো রেজাল্ট করতে হবে। এই মানসিকতার ফলে নির্ভরতা তৈরি হচ্ছে কোচিং এর উপর। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের এই মানসিকতার সুযোগ নিয়ে আমলা- অসাধু ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় শাসক গোষ্ঠীর সর্বগ্রাসী আক্রমণ চলছে। স্বাধীনতার পর সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা ছিল শিক্ষা হবে সর্বজনীন গণতান্ত্রিক একধারার। আমাদের সংবিধানে একমুখী শিক্ষার কথা থাকলেও সাধারণ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ইংলিশ মিডিয়াম প্রধানত চার ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভক্ত। সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ণ করে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সর্বস্তরে অগণতান্ত্রিক,বৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করছে। ধনী-গরিব বৈষম্য বেড়েছে। সর্বস্তরের মানুষকে শিক্ষিত করার পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের নামে পদ্ধতি পরিবর্তন ও পাসের হার বাড়িয়ে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে গণমুখী করার জন্য যে বরাদ্দ দরকার তা দিন দিন কমছে। দেশের ৮০% শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। সরকারি উদ্যেগে পর্যাপ্ত স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত না হলে এ সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে। শাসক শ্রেণি সবসময় সেকুল্যর ও বিজ্ঞান শিক্ষার দাবিকে অবহেলা করে আসছে। বরং মৌলবাদী গৌষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়ে পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় বড় সাহিত্যিকদের পাঠ বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠছে কূপমন্ডুক, ধর্মান্ধ হয়ে। তার উপর বছর বছর বেতন-ফি দ্বিগুণ তিনগুন হারে বাড়িয়েছে। ইউনেস্কোর তথ্যমতে দেশে শিক্ষার হার এখনো ৪৭.৫০শতাংশ। যারা শিক্ষাক্সগনে যাওয়ার সুযোগ পায় অর্থের অভাবে বড় একটা অংশ নানা স্তরে ঝরে যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা খাতে বরাদ্দ শুণ্যের কোটায়/ নামে মাত্র। বিশ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র প্রণয়ন করে নাইট কোর্স চালুসহ বিভিন্ন আয় বর্ধক প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রাইভেটে পরিণত করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকটের দাবি পূরণ না করে নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের গিনিপিগে পরিণত করা হয়েছে। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও কোচিং নির্ভরতা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য বিস্তার কররছে। এ রকম পরিস্থিতে দেহ-মনে বিকশিত করার জন্য স্কুল-পাড়া- মহল্লায় কোন সাংস্কৃতিক আয়োজন নেই। বিকাশের স্বাভাবিক পথ না থাকায় বিকৃতি তথা অশ্লীলতা অপসংস্কৃতির দিকে ঝোঁক বেড়েছে। সংকটের সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছে ধর্মীয় উগ্রতাকে।”

IMG_0122নগর সভাপতি তাজ নাহার রিপন বলেন,“স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামে একটিও সরকারি স্কুল নির্মিত হয়নি। যে ৯টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল আছে সব কটিই নির্মিত হয়েছে বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে। সরকারি কলেজ আছে মাত্র ৬টি। ৬০লক্ষ মানুষের শহরে খুবই অপ্রতুল। সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ৪৭টি কলেজ ও ৬টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে পড়াশুনা করে নিন্মবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা। ২০১৫ সাল থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের নেয়ায় মাসিক বেতন –ফি বেড়েছে তিনগুন হারে। আমরা চট্টগ্রামের শিক্ষা অধিকার নিয়ে সারা দেশের মতো এখানে একটি কার্যকর ছাত্র আন্দোলনে বদ্ধ পরিকর। সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা এ কথাটি জানতে চাই । কলেজ –বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস, চাদাঁবাজিতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা অতিষ্ট। শিশু কিশোরদের জীবন আজ নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে। শিশু কিশোরদের সরলতার সুযোগ নিয়ে মাদকব্যবসা চাদাঁবাজীরা তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। আদনান হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষা সংস্কৃতি মনুষ্যত্ব রক্ষার উদ্দেশ্য।”

কমরেড মানস নন্দী বলেন, “সরকারের গণবিরোধী নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, দমনমূলক শাসন, চুড়ান্ত লুটপাট, দূর্নীতি, দখলদারিত্ব, দলীয়করণ চূড়ান্ত পর্যায়ে। “কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন ” এ কথা বলে কোন প্রকার মতামতের তোয়াক্কা না করে চরম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম দুই তৃতীয়াংশ কমার পরেও দেশে কমানো হয়নি বিদ্যুৎ এর দাম বরং এই নিয়ে ৮ বারের মত বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের দাম, গাড়ি ভাড়া, বাড়িভাড়া, পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ। এ অবস্থায় প্রয়োজন একটি সর্ব ব্যাপক আন্দোলন।”

আলোচনার পর নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর নাটক ‘গর্ত’ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

নব গঠিত কমিটি

সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দিন, সহ-সভাপতি দীপা মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক জয়তু সুশীল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সায়েম, দপ্তর সম্পাদক রাজেশ্বর দাশগুপ্ত, অর্থ সম্পাদক টুম্পা বড়ুয়া, প্রচার স্পাদক পূজন কান্তি দে, স্কুল বিষয়ক সম্পাদক এ্যানি চৌধুরী, সদস্য- প্রশান্ত দে, রিপা মজুমদার, মুশফিক উদ্দিন ওয়াসি

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments