সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে বর্ষবরণ উৎসবে নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ, দোষীদের গ্রেপ্তার-বিচার ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে ২৩ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল ১১টায় ডাকসু ভবনের সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু।
বক্তরা বলেন, ‘বর্ষবরণের দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়নের যে ঘটনা ঘটেছে তা ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। কিন্তু আমরা দেখলাম কর্তব্যরত পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে এবং অপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছে। অধিকন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এই অবস্থায় একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকার নৈতিকতা তিনি হারিয়েছেন। পহেলা বৈশাখে ক্যাম্পাসে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হবে এবং এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে – এমন সাধারণ বিষয়েও যতটুকু প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা থাকার কথা ছিল, গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু উৎসব উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক কনসার্ট, ব্যান্ড শো, বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বিক্রি, বিজ্ঞাপনী প্রচার ইত্যাদির অনুমোদন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে কলুষিত করা হয়েছে।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘ শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এবং অন্যান্য সময়ে চিহ্নিত সরকার দলীয় ক্যাডারদের হাতে বেশ কিছু নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। ‘লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত’র কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নির্যাতিত হয়েছে, কার্জন হলে আত্মীয়সহ এক নারীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, জগন্নাথ হলে ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে, হলগুলোতে চিহ্নিত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ইয়াবার ব্যবসা ইত্যাদির খবর পত্র-পত্রিকায় এসেছে, সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় খুন হলেন -এর কোনোটির ব্যাপারেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এসবের প্রেক্ষিতে পহেলা বৈশাখে নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের এমন একটি বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নারী নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগই ধামা চাপা পড়েছে। বিভিন্ন আন্দোলন থেকে দাবি উঠেছিল যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের। ইউজিসি’র প্রস্তাবনাতেও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এই পরিস্থিতি দুঃখজনক।’
বক্তরা অবিলম্বে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসবে যৌননিপীড়নের ঘটনায় চিহ্নিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারে দাবি জানান। একই সাথে তাঁরা ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানান।’
সমাবেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে।