মহান নভেম্বর বিপ্লবের চেতনায় সমাজ বদলের পরিপূরক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ৮ম কর্মী সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ৮ম কর্মী সদস্য সম্মেলন গত ২৮-৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনাতয়নে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্তী রিন্টু। সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে আলোচনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ও কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেডস্ মানস নন্দী, মঞ্জুরা হক নীলা ও উজ্জ্বল রায়।
কর্মী সদস্য সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছিল মহান নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষকে কেন্দ্র করে। প্রথম দিন ‘সমাজতন্ত্র কেন অনিবার্য’ এই বিষয়ের উপর কমরেড শিবদাষ ঘোষে ‘মার্কসবাদ ও মানব সমাজের বিকাশ প্রসঙ্গে’ বইটিকে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়। শুরুতেই আলোচনা উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির স্কুল বিষয়ক সম্পাদক তাজনাহার রিপন। দ্বিতীয় দিন ‘শোধনবাদ কীভাবে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটিয়েছিল’ এই বিষয়য়ের উপর কমরেড শিবদাস ঘোষের ‘চেকোশ্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত মিলিটারি হস্তক্ষেপ রাশিয়ায় সংশোধনবাদের বিকাশ ও পুঁজিবাদের বিপদ প্রসঙ্গে’ বইটিকে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়। এবিষয়ে আলোচনা সূত্রপাত করেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইভা মজুমদার। তৃতীয় দিন ‘সমাজতন্ত্র মানব সভ্যতাকে কী দিয়েছিল’ ও ‘সোভিয়েত রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা’ – এই দুটি বিষয়ের উপর আলোচনা করেন যথাক্রমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য ও সহ-সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস।
তিনদিন ব্যাপী এ আয়োজনে সারাদেশ থেকে আগত নেতা-কর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। প্রশ্ন , আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত কর্মী সদস্য সম্মেলনে এ প্রত্যয় আরো দৃঢ় হয়ে উঠে- সমাজ বিকাশের নিয়মেই ইতিহাসে সমাজতন্ত্র অপরিহার্য। মানব সমাজে শ্রেণী বিভক্ত হবার পর থেকে অদ্যাবধি শোষক ও শোষিত শ্রেণীর দ্বন্দ্ব সংঘাতের পথেই সমাজের বিকাশ সাধিত হয়েছে। আজকেও গোটা সমাজ দুটি শিবিরে বিভক্ত। মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীতে। এই দুই শ্রেণী পরস্পরবিরোধী স্বার্থ সংঘাতে জড়িয়ে আছে। এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা হবে ইতিহাসে শ্রমিক শ্রেণীর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে। সোভিয়েত রাশিয়ায় মহান লেনিনের নেতৃত্বে এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল। স্ট্যালিনের নেতৃত্বে এমন এক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল যেখানে মানুষের উপর মানুষের সমস্ত ধরনের নিপীড়ন বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর তৎকালীন সোভিয়েত নেতৃত্বের শোধনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ধীরে ধীরে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় নেমে আসে। এবিপর্যয় সাময়িক। মানুষ তার মুক্তির প্রয়োজনেই আবার লড়াই করছে, করবে। এ লড়াইকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে হলে সমস্ত লড়াইকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সাথে যুক্ত করতে হবে। সেই প্রত্যয়েই এদেশের বুকে সমাজ বদলের পরিপূরক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এ লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এ লক্ষ্যে গৃহীত কেন্দ্রীয় কর্ম পরিকল্পনা প্রতিটি ইউনিটে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে এ সম্মেলন সমাপ্ত হয়।