Saturday, November 23, 2024
Homeফিচারসময় থাকতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিন

সময় থাকতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, “আজ সকালে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মঈনউদ্দিন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তিনি কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী প্রথম চিকিৎসক। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ডা. মঈনউদ্দিন ঢাকায় আসার জন্য একটি এয়ার এম্বুলেন্স চেয়েও পাননি। অবশেষে তাঁর পরিবার এবং সহকর্মী চিকিৎসকদের সহযোগিতায় একটি প্রাইভেট আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সহযোগে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে এসে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংবাদমাধ্যমে এসেছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৫ জন ডাক্তার। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এদেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রীর জন্য দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। তাদের বিনা নিরাপত্তায় চিকিৎসা দিতে একরকম বাধ্য করা হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ও অবস্ বিভাগের একজন চিকিৎসক কোভিড পজেটিভ ধরা পড়ার পরও অন্য সকল ডাক্তারকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়নি। এখন সেখানে ৩ জন পজেটিভ। এদের মাধ্যমে হয়তো অনেক ডাক্তার ও রোগীদের মাঝে ইতিমধ্যেই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন ছাড় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা চাইছেন না, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে সাধারণ প্রটোকলও মানা হচ্ছে না।
কোভিড ১৯ এর জন্য নির্ধারিত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তাররা, নার্সরা খাবারের সংকটে ভুগছেন। থাকার জায়গায় একরুমে একাধিক এমনকি ৬/৭ জন করেও থাকছেন। অথচ সংক্রমণজনিত নিরাপত্তার জন্য একরুমে একজনের থাকার কথা। রাজধানী ঢাকায়, যেখানে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি, সকল উচ্চপদস্থ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যেখানে বাস করেন, সেখানে করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা দেয়ার জন্য নির্ধারিত ৬টি হাসপাতালের একটির অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে দেশের বাকি হাসপাতালগুলোর অবস্থা নিয়ে বেশি প্রত্যাশা করা উচিত নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল, মফস্বল শহর এমনকি বিভাগীয় শহরে ডাক্তার ও স্বাস্থকর্মীরা প্রায় কোন নিরাপত্তা ছাড়াই এই সংকটের দিনে কাজ করে যাচ্ছেন।
কোন নিরাপত্তাই শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়না। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও ডাক্তার ও স্বাস্থকর্মীদের এতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে সবার আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলে আরও অনেক লোকের সহায় হতে পারবেন। কিন্তু তা না করে সরকার বরং ডাক্তারদের ক্রমশ হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ডাক্তারদের কটাক্ষ করেছেন। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডাক্তার আনাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বহিস্কার করার পর চিকিৎসক মহল ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের তীব্র ক্ষোভের চাপে মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও সরকারের চৈতন্য আসেনি।
আমরা আগেই বলেছি, আমরা এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। উন্নত দেশের সুগঠিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা যখন এই মহামারী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন আমাদের আরও অনেক বেশি সচেতন থাকা ও বিচক্ষণ হওয়া দরকার ছিল। যেসকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাদের চোখের মণির মতো রক্ষা করার দরকার ছিল। কিন্তু তা করা হল না। হাজার কোটি টাকার মালিক ও তাদের পাহারাদার সরকারের মন্ত্রী-আমলা-আওয়ামী লীগের বড় নেতা-কেবল এদের জন্যই চিকিৎসার আয়োজন করে রাখা আছে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মৃত্যু চোখের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল শ্রেণিবৈষম্য কী নির্মম! তারা সবাইকে হাজারো নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সুস্থ করবেন, কিন্তু সেই হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা হবে না। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক তাই অন লাইন একটা পত্রিকায় লিখেছেন,
“এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স কি শুধু লুটেরাদের জন্য?”
আমরা এই চিকিৎসকের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। সাথে সাথে তাঁর যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এখনও যতটুকু সময় আছে তার সদ্ব্যবহার করুন। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। তাদের অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। ”
RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments