Monday, December 23, 2024
Homeছাত্র ফ্রন্টসরকারি সকল চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি

সরকারি সকল চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি

1523198933_0

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা এবং সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু আজ এক যুক্ত বিবৃতিতে, কোটা সংস্কারের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অবিলম্বে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, দেশে ভয়াবহ বেকার সংকট বিরাজ করছে। প্রতিবছর শ্রমবাজারে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ১২-১৩ লাখ যুবক। এর মধ্য প্রায় ৪৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত বেকার। নতুন নতুন কর্মসংস্থান নেই, সরকারি চাকরি খুবই অপ্রতুল। সুযোগ সুবিধা আর বেতন কাঠামো বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সুযোগে বিসিএস এখন চাকরি প্রত্যাশিদের জন্য যেন সোনার হরিণ। প্রায় চার লক্ষের মত পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও আসন আছে মাত্র ২২’শ জনের জন্য। তার মধ্যে কোটা খড়গের কারণে মেধার ভিত্তিতে মাত্র ৪৫ শতাংশ সাধারণ শিক্ষার্থী সুযোগ পাচ্ছে; বাকি ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কোটার ভিত্তিতে। বৈষম্য কমানোর দাবিতে কোটা প্রথা চালু করা হলেও কোটায় এখন বৈষম্য তৈরি করছে। তাই কোটা প্রথা সংস্কার এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে নূন্যতম ভ্রুক্ষেপ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি- পুতিদের ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্য সকল ক্ষেত্রে যে নজিরবিহীন অব্যবস্থাপনা, ব্যাংক লুটপাট, নারী নির্যাতন, নিরাপত্তাহীনতাসহ দু:শাসনের যে নজির স্থাপিত হয়েছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই। যে কোনো আন্দোলন তার স্বাথের্র বিপক্ষে গেলেই জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল হিসেবেই তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় ছিল বৈষম্যহীন দেশ গড়া। সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে তাকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া। এজন্য প্রয়োজন কৃষি ও শিল্পকে ঢেলে সাজিয়ে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা। কিন্তু অতীত বর্তমানের সব সরকারই সে পথে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ রাজনীতির নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। বর্তমান সরকার নিজেদের কায়েমী স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছে। সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনে আমরা এ প্রবণতা লক্ষ্য করছি। কোটা সংস্কারের কথা আসলে সরকার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ষড়যন্ত্রের জুজু দেখাচ্ছে, আরেকদল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিজেদের রাজনীতি চাঙ্গা করতে চাইছে। দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ফলে স্বাধীন দেশে তাদের পরিবারকে সহযোগিতার জন্য নানা আয়োজন করতে হয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবে যৌক্তিক হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, জেলা কোটার ক্ষেত্রে বৈষম্য কাজ করে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে এ পদ্ধতি চালু থাকায় ছোট জেলাগুলো কোনো কোটা না পাওয়াসহ এ পদ্ধতি ব্যাপক দুর্নীতিতে পর্যবসিত হয়েছে। এই কোটা বাতিল করার দাবি গ্রহণযোগ্য। নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তেমন আসে নি। তবে শতাংশ কমানোর দাবি এসেছে। কোটা প্রথার প্রচলন সারা বিশ্বেই আছে। সমাজের অনগ্রসর অংশ যেন সমস্ত ক্ষেত্রে বিচরণে এগিয়ে আসতে পারে সেজন্য কোটা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আমাদের সংবিধানেও বৈষম্যহীনতার কথা বলছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রম হিসেবে ( যেমন সমাজের অনগ্রসর অংশের জন্য) কোটাকে অনুমোদন করেছে। কিন্তু যেকোন প্রথার সময়ের সাপেক্ষে মূল্যায়ন করা দরকার। আমরা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ- পেশাজীবী- বুদ্ধিজীবিদের যুক্ত করে ‘কোটা সংস্কার কমিটি’ গঠন করার দাবি জানাই। একই সাথে আমরা মনে করি, রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে শুধু কোটা সংস্কার করে চাকরির সমস্যার সমাধান হবে না।সমাজের স্বার্থে উৎপাদনশীল নতুন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সকল নাগরিকদের কাজ পাবার অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

 

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments