Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদসরকার রাজনৈতিক ক্ষমতা নিরাপদ করতে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে

সরকার রাজনৈতিক ক্ষমতা নিরাপদ করতে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে

Seaতেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোর ইচ্ছা অনুযায়ী উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি মডেল বা ‘পিএসসি’ তাদের স্বার্থে আরও সংশোধন করে একের পর এক সর্বনাশা চুক্তি করে যাচ্ছে। এর আগে এই অনুযায়ি ভারতের ওএনজিসির সাথে বঙ্গোপসাগরের ২টি গ্যাসব্লক, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের দুই কোম্পানির সাথে ১টি ব্লক নিয়ে চুক্তি সই করবার পর গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কনকো-ফিলিপস ও নরওয়ের স্টেটওয়েল এর যৌথ গ্রুপের সাথে গভীর সমুদ্রের তিনটি তেল-গ্যাস ব্লক (ব্লক ১২, ১৬ ও ২১) নিয়ে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।

“আমরা সবসময়ই বলে আসছি যে, প্রাথমিক জ্বালানীর সংকটের মুখে বঙ্গোপসাগরের গ্যাসসম্পদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানী নিরাপত্তার প্রধান অবলম্বন। অথচ একের পর এক এসব চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাহীন করে, বিদেশি কোম্পানিকে এত বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যে, নিজ দেশের গ্যাস সম্পদ বাংলাদেশের জন্য কোন কাজে লাগানো যাবে না, বরং অর্থনীতিতে বোঝা হয়ে অভিশাপে পরিণত হবে।

“সংশোধিত পিএসসিতে বিদেশি কোম্পানির অধিকতর মুনাফার স্বার্থে গ্যাসের ক্রয়মূল্য আগের চুক্তির তুলনায় শতকরা ৭০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর গ্যাসের দাম শতকরা ২ ভাগ বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তৃতীয়ত, ব্যয় পরিশোধ পর্বে গভীর সমুদ্রে বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্ব শতকরা ৫৫ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে শতকরা ৭০ ভাগ করা হয়েছে। চতুর্থত, ইচ্ছামত দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এবং পঞ্চমত, তাদের কোন কর্পোরেট ট্যাক্স না দেবার সুযোগ রাখা হয়েছে।

“পুঁজির অভাবের কথা বলে এরকম চুক্তি করা হচ্ছে, অথচ এর আগের চুক্তি অনুযায়ী ৫ বছরে মাত্র ২৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিতে অস্ট্রেলীয় সান্টোস এবং সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি বঙ্গোপসাগরের ১১ নম্বর ব্লক র ১০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি অঞ্চলের সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করলো। স্পষ্টতই বাংলাদেশের সামর্থ্য আছে, দক্ষতাও তৈরি করা সম্ভব পরিকল্পনা পূর্বক। তা সত্ত্বেও এইরকম মডেলে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ যে শুধু বিদেশি কোম্পানির দখলে চলে যাচ্ছে তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নের জন্য গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগানোর ভবিষ্যৎ সুযোগও বিপর্যস্ত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানী ও জাতীয় নিরাপত্তা দুটোই হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে।

“সরকার এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন কোন কোম্পানিকে একটির বেশি ব্লক দেয়া হবে না, আবার বলা হয়েছিলো একসাথে দুটো ব্লকের বেশি চুক্তি করা হবে না। সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছিলো বঙ্গোপসাগরে আগে সাইজমিক সার্ভে করে তারপর চুক্তি করা হবে। গতকালের চুক্তি এই সবগুলো ঘোষণারই লঙ্ঘন। মনে হচ্ছে সরকার নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিরাপদ ও শক্তিশালী করার স্বার্থে নিজেদেরই পূর্ব ঘোষণা লঙ্ঘন করে মার্কিনীসহ বিদেশিদের সন্তুষ্ট করবার জন্য দেশের জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে।

“আমরা বারবার সরকারকে এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত হয়ে তার পরিবর্তে জাতীয় সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, প্রয়োজনে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার এবারে ক্ষমতায় এসেই আরও দ্রুত জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরের সর্বনাশা কাজে লিপ্ত হয়েছে। এই ধরনের চুক্তি কমিশনভোগী, জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তি ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা সরকারকে এই তৎপরতা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা জনগণকে বঞ্চিত করে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেশের সম্পদ উজাড় করে দেওয়ার এইসব দুর্নীতিমূলক চুক্তির বিরুদ্ধে বিশেষজ্ঞসহ সকল পর্যায়ের মানুষকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানাচ্ছি।”

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments