বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন’ তাদের মুখপত্র ‘সাম্যবার্তা’ পত্রিকায় ‘রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে নয়, গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থানের পথেই সমাধান’ নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ‘বাসদ (মার্কসবাদী)’ এর উদ্যোগে গত ৫ এপ্রিল পাঁচ দফা দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচির সমালোচনা করেই প্রবন্ধটি রচিত।
বাসদ (মার্কসবাদী) দলের একটি কর্মসূচী নিয়ে সমালোচনা হলেও, এর মাধ্যমে আন্দোলন ও কর্মসূচি সম্পর্কে বামপন্থীদের কিছু দৃষ্টিভঙ্গিগত বিতর্ক সামনে এসেছে। মূলতঃ মন্তব্যগোছের একটি ছোট লেখা হলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বামপন্থী আন্দোলনের কর্মীদের প্রয়োজনীয় সক্রিয়তার অভাবের কারণ বুঝতে এ বিষয়টি আলোচিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।
বিপ্লবী অভ্যূত্থান ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন প্রসঙ্গে
‘সাম্যবার্তা’ পত্রিকার বক্তব্য সার-সংক্ষেপ করলে দাঁড়ায় যে, ‘রাষ্ট্রপতির যেহেতু বিশেষ কোন ক্ষমতা নেই, ফলে এ কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবিগুলো রাষ্ট্রপতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। অথচ বাসদ (মার্কসবাদী) রাষ্ট্রপতির কাছে সমাধান খুঁজছে, যখন বামপন্থীসহ গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থানের কথা বলছে। আবেদন-নিবেদনে এ সরকার পদত্যাগ করবে না। বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়া শক্তি গণঅভ্যুত্থানের দিকে যাবে না। অভ্যুত্থানকারী জনতার দাবি ও আকাঙ্খাপূরণ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অসমর্থ রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের বিপক্ষে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে তা থেকে দৃষ্টি ফেরানো বা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যই বাসদ (মার্কসবাদী) দলের এ কর্মসূচি।’
একটা বিষয় প্রথমেই পরিস্কার করে নেয়া দরকার। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়ে সাম্যবাদী আন্দোলনের বক্তব্যের সাথে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। আর ক্ষমতা থাকলেও যে রাষ্ট্রপতি দাবি মেনে নিতেনÑ এরকম হাস্যকর ভাবনাও আমাদের নেই। কিন্তু তারপরও আমরা রাষ্ট্রপতিকে স্মরকলিপি দিচ্ছি এজন্য যে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সংকুচিত হবার পরও, এখন পর্যন্ত সামান্য যতটুকু আইনি প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যায়Ñ সেটুকুকে আমরা গণআন্দোলনের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছি। হঠকারি চিন্তা না থাকলে সামান্যতম আইনি অধিকারকে কাজে লাগানোর সুযোগ কোন রাজনৈতিক শক্তি হাতছাড়া করতে পারে না। আর একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে একটি বিপ্লবী দল কোন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কত ক্ষমতা আছে তার প্রেক্ষিতে দাবি-দাওয়া পেশ করেনা। দাবি তোলে রাষ্ট্র ও সরকারকে রাজনৈতিকভাবে উন্মোচিত করার জন্য। এটাই মহান লেনিনের শিক্ষা। ফলে আমরা রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছি না, বরং আমাদের সাংগঠনিক সামর্থ্য অনুযায়ী সামান্যতম আইনি সুযোগকে গণআন্দোলনের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছি।
আমরা বিনয়ের সাথে সাম্যবাদী আন্দোলন ও একই মতামত ধারণকারী অন্যান্য দলের বামপন্থী কর্মীদের কাছে কিছু প্রশ্ন রাখতে চাই। আমরা যতটুকু জানি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলন বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত ও অবৈধ বলে মনে করেন এবং তার পদত্যাগ দাবি করেন। বামপন্থীসহ প্রায় সকল বিরোধী দলই এই দাবি করে। আবার এও ঠিক, যে সরকারকে আমরা অবৈধ বলছি, তার কাছেই মজুরি বৃদ্ধির দাবি, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, রেশনিংসহ নানা দাবি করেছি ও করছি, সে লক্ষ্যে কর্মসূচি পালন করছি। সাম্যবাদী আন্দোলনও করছেন। প্রায় সকল বামপন্থী দল একত্রে এসকল দাবিতে আমরা হরতালও পালন করেছি (সাম্যবাদী আন্দোলনও সেখানে ছিলেন)। প্রশ্ন আসে অবৈধ সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া পেশ করে তাকে কি বৈধতা দেয়া হয়নি?
আবার, এ সরকারের পদত্যাগ চাই একথা যখন বলছি তখন সে যে পদে আছে সেটা তো স্বীকার করে নিয়েই বলছি। কারণ অগণতান্ত্রিকভাবে এ সরকারের ক্ষমতা দখল করাটাকে তো আমরা ঠেকাতে পারিনি। গোটা দেশের জনগণের মধ্যে বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনকে নিয়ে ক্ষোভ ছিল। তার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রতিদিনের বেড়ে চলা অর্থনৈতিক কষ্ট, যুক্ত হয়েছে মত প্রকাশের অধিকার হরণের জ¦ালা। এসব মিলিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উপর জনগণ চূড়ান্তভাবে বিক্ষুব্ধ। কিন্তু এটাও ঠিক যে, এই বিক্ষোভকে আন্দোলনে রূপ দিতে বামপন্থী শক্তি পারেনি। এটা আমাদের সমালোচনা নয়, আত্মসমালোচনা। কারণ আমরা এই বামপন্থী শিবিরেরই অংশ। আওয়ামী লীগকে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে আমরা বাধ্য করতে পারিনি। এ পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রূপ কী হবে? মার্কসবাদী অথরিটিদের কাছ থেকে আমরা জানি যে, শ্রেণিসংগ্রামের ঘণিভূত প্রকাশই হলো রাজনৈতিক সংগ্রাম। আর নির্দিষ্ট সময়ের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাই মার্কসবাদ। বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের কাছে আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, এ সময়ে শ্রমিক শ্রেণির সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দাবিটি কী হওয়া উচিত? এটা কি চাল, ডাল, তেলের দাম কমানো? মজুরি বৃদ্ধি? না কি শুধু ব্যবস্থা বদলের সাধারণ ঘোষণা? কোনটি?
‘সাম্যবাদী আন্দোলন’-এর বিচারধারা অনুসারে ঘটনা বিচার করলে এ সময়ে একমাত্র কর্মসূচি হওয়া উচিত এই সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার উচ্ছেদ! সে লক্ষ্যে তাদের কর্মসূচি কোথায়? তারা এই কর্মসূচি দিচ্ছেন না কারণ হয়তো তারা জানেন যে, এটা বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না।
তাহলে তারা কী করছেন? আসলে তারা কী করবেন বুঝতে পারছেন না। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য জনগণকে আহবান জানানো তাদের হঠকারি কর্মসূচি মনে হচ্ছে আর গণতান্ত্রিকভাবে দাবি-দাওয়া পেশ করার কর্মসূচিকে মনে হচ্ছে আপোষকামিতা। এমতাবস্থায় তারা চুপ করে বসে থাকাকেই একমাত্র বিপ্লবী কর্মসূচি বলে গ্রহণ করেছেন। আমরা আইনী অধিকারের সর্বোচ্চটুকু ব্যবহার করে সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র আরও উন্মোচিত করেছি বলে আমরা আপোষকামী শক্তি হয়েছি এবং সরকারকে বৈধতা দান করছি। তারা চুপ করে বসে থেকে সরকারকে ভীষণ বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।
গোটা বামপন্থী মহল যে গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থানের কথা বলছে, সেটা আমরাও বলছি। গণঅভ্যূত্থানের কথা বলার সাথে সাথে বিভিন্ন জ¦লন্ত ইস্যুতে বামপন্থী দলগুলো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে, আমরাও করছি। আমরা শুধু একদিনের, এক বিকেলের, ছোট একটি এলাকাজুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিক্রিয়া ও প্রচারমূলক কর্মসূচিকে সময় ও স্থানের দিক থেকে বড় ব্যাপ্তি দিয়েছি, আরও বেশি মানুষকে যুক্ত করেছি। প্রেসক্লাব কিংবা পল্টনে দাঁড়িয়ে উত্থাপন করা দাবি নিশ্চয় শূণ্যে ছুড়ে দেয়া নয়, সরকারের উদ্দেশ্যেই বলা। আমরা সাংবিধানিক পদ হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করেছি মাত্র।
একটু ভেবে দেখুন। অগণতান্ত্রিকভাবে অনির্বাচিত একটি সরকার দশ বছর অতিক্রম করল। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এর বিরুদ্ধে থাকার পরও আমরা কার্যকর কোন প্রতিরোধ-আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি। আন্দোলন এখনও প্রচার-প্রোপাগান্ডার স্তরেই আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র এবং তার আইন ও শাসনকাঠামোকে স্বীকার করে আন্দোলন ভাবছি, ততক্ষণ আমরা চাই বা না চাই, এই অনির্বাচিত মন্ত্রী, এমপি এবং সকল সাংবিধানিক পদকে স্বীকার করতে আমরা বাধ্য। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করলে সেটা মানার কোন প্রশ্ন নেই। তখন রাষ্ট্র দখলের প্রশ্ন। এই সত্যকে মেনে নিতে না পারলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কোন পর্যায়ে আমরা আছি সেটা বুঝতে পারব না এবং এর প্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ করতে পারব না। এই অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীর কাছে দৈনন্দিন বিভিন্ন সংকটে দাবি-দাওয়া পেশ করা কিংবা এই রাষ্ট্রপতির কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করাতে উন্নতশির বিপ্লবীদের অপমানিত বোধ করার মধ্যে কোন উন্নত রাজনৈতিক চেতনা নেই, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচার-বিশ্লেষণের অভাব আছে।
সকল কর্মসূচিকেই মূল রাজনৈতিক লাইনের পরিপূরক হতে হবে
সাম্যবার্তার অভিযোগ- ‘বাসদ (মার্কসবাদী)’ নির্বাচনী মোহ তৈরি করছে আর ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে আড়াল করছে। এই বিষয়টি আলোচিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের দিনে, পুঁজিবাদের এই তৃতীয় সাধারণ সংকটের সময়ে, প্রতিটি দেশের বুর্জোয়ারাই, তা তারা লগ্নি পুঁজির জন্ম দিয়ে থাকুক আর নাই থাকুক, উন্নত হউক বা অনুন্নত হউক, সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে ও সংহত করতে নগ্নভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে সবদিক থেকে ব্যবহার করতে চাইছে। তাই যে দেশই আজ পুঁজিবাদী পথে এগোতে চাইছে, তার অর্থনৈতিক সংকট যেমন গভীরতর হচ্ছে, তেমনি রাজনীতির ক্ষেত্রেও সেই রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী চরিত্র প্রকট হয়ে উঠছে। এ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই সকল পুঁজিবাদী দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উচ্ছেদের বাস্তব পরিস্থিতি সৃষ্টি না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত চাষী-মজুর-মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যা ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে ভিত্তি করে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলো গড়ে তোলা বিপ্লবী শক্তির পক্ষে একটি অপরিহার্য কাজ। দেখতে হবে কোন বামপন্থী শক্তি এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলো যখন গড়ে তুলছে তখন তাকে সে তার মূল রাজনৈতিক লাইন, অর্থাৎ পুঁজিবাদবিরোধী বিপ্লবের সাথে মেলাচ্ছে কি না। সে যদি তার কর্মসূচি ও প্রচারপত্রে, তার বক্তব্যে পুঁজিবাদবিরোধী রাজনৈতিক লাইনকে আড়াল করেÑ তবে সে দলের শ্রেণিচরিত্র নিয়েই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। শুধু রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক দাবি-দাওয়ার ক্ষেত্রে নয়, অর্থনৈতিক আন্দোলনকেও সে যদি অর্থনীতিবাদের গণ্ডিতে আবদ্ধ রেখে দেয়, তাহলে সেটা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত পুঁজিবাদী শক্তিকেই শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী করে। বর্তমানে দেশে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যারা শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনই সব সমস্যার সমাধান বলে মনে করেন, তারাও মানুষের কাছে এই সত্য আড়াল করতে চান। আমরা তা করছি কি?
রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মরকলিপি কর্মসূচির প্রচারপত্রটিতে ‘আপেক্ষিকভাবে সুষ্ঠ নির্বাচন হলেই এই জনদুর্দশা থেকে মুক্তি মিলবে কি?’- এই শিরোনামে একটি অনুচ্ছেদ আছে। সেখানে স্পষ্টভাবে ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া যে মুক্তি আসবেনা তা উল্লেখ করা আছে এবং একটা আপেক্ষিকভাবে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে গণআন্দোলনের কী সুবিধা হবে তাও দেখানো হয়েছে। বাসদ (মার্কসবাদী) এ সময়ের মূল সমস্যা পুঁজিবাদের উচ্ছেদের কথা যেমন বলছে, একইসাথে বুর্জোয়া ও সর্বহারা শ্রেণির মূল দ্বন্দ্বের প্রধান দিক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ের আহবান জানাচ্ছে। আজকের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শুধু ব্যবস্থা বদলের কথা বললাম, কিন্তু প্রধান দ্বন্দ্বের প্রধান দিককে আড়ালে রাখলাম- এটা কোন মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিই নয়। তাই পুঁজিবাদবিরোধী সংগ্রামের বর্ষামুখ আজ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই নিক্ষেপ করতে হবে। এ দুই কর্তব্যের যে কোন একটিকে আড়াল করলে সর্বহারা শ্রেণির রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ মার খাবে। বাংলাদেশের বামপন্থী দলগুলির মধ্যে দুটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়- একদল শুধু ব্যবস্থা বদলের স্লোগান তুলে আশু রাজনৈতিক কর্তব্য বা আঘাতের প্রধান দিককে আড়াল করছেন। আর আরেক দল আশু কর্তব্যের কথা বলে ব্যবস্থা সৃষ্ট সংকটকে আড়াল করছেন। এ দুই প্রবণতাই বিপ্লবী বামপন্থার জন্য বিপদজনক। এ দু’য়ের দ্বান্দ্বিক অবস্থান বুঝেই করণীয় ঠিক করতে হবে। আমরা আমাদের মার্কসবাদী শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সে চেষ্টাই করছি। লিফলেটে সংক্ষিপ্তভাবে দিলেও এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র প্রকাশিত আমাদের বুলেটিনে এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
বর্তমানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তীব্র। মানুষ যেমন অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি চাইছে, তেমনি রাজনৈতিক সংকট থেকেও পরিত্রাণ পেতে চাইছে। তাদের কাছে রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ কী- সেই বক্তব্য নিয়ে যাওয়া দরকার। সেটা বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই নিয়ে যেতে হবে। গণঅভ্যূত্থানের কথা বলাই বিপ্লবী কর্মসূচি নয়, বিপ্লবী দায়িত্ব হচ্ছে সেটা জনগণকে বোঝানো ও তাদের পথে নামানো। সেই কাজ কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় করবেন তা ঠিক করা বামপন্থী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
‘সাম্যবার্তা’ পত্রিকার গণঅভ্যুত্থানের গর্জন প্রসঙ্গে
RELATED ARTICLES