বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের ফ্যাসিস্ট-সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সবচেয়ে সরব ছিল দেশের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের ধারাবাহিক প্রতিবাদের স্ফূলিঙ্গ পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমুহ ১৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯ মার্চ বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৫ মার্চ মশাল মিছিল কর্মসূচী ঘোষণা করে। এ কর্মসূচী ঘোষণার পরপরই মোদির এদেশীয় দোসর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের গুন্ডা বাহিনী ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বাম ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের ‘কলিজা ছিঁড়ে’নেয়ার হুমকি দেয়। ছাত্রলীগ এবং পুলিশের উপর্যপুরী হুমকি উপেক্ষা করে ১৯ মার্চ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরবর্তীতে ২৩ মার্চ প্রগতিশীল ছাত্র জোট নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ করতে গেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হামলা চালায়। হামলায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ঢাবি শাখার সহসভাপতি সাদিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেঘমল্লার বসু, আসমানী আশা সহ প্রায় ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়। এর মধ্যে প্রগতি বর্মণ তমার মাথা ফেটে যায়। এর প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ হয়। এরপর ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমুহ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মশাল মিছিল করে। সেদিনও মশাল মিছিল শেষে নেতাকর্মীরা যখন ফেরত যাচ্ছিল তখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আবারও হামলা চালায়। হামলায় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বিশ্বাসসহ অনেকে আহত হয়। ২৫ মার্চ সারাদেশে বামজোটের মোদি বিরোধী কর্মসূচী থেকে পুলিশ অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হামলা করে। এসকল হামলা গ্রেফতার এবং মোদির আগমনের প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসেও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ ঢাকা কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের হামলা-গ্রেফতার-হুমকি উপেক্ষা করে সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধি ফ্যাসিস্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়েছে।
ভারতীয় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ভারতের পুঁজিপতি শ্রেণীর বর্তমানকালের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি, যারা ভারতের জনগণকে শোষণের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তার করছে। নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদী উগ্রতা ছড়িয়ে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার শোষিত জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও বিদ্বেষ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছে। ভারত সরকার নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকাসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে ভারতের আঁতাত ও ভারত-চীন সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ভারতকে ট্রানজিট-বন্দর-নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ একতরফা নানা সুবিধা দিলেও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ আদায় করতে সক্ষম হয়নি। ফলে, মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার শেখ হাসিনার বন্ধু হলেও বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু নয়।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের জনগণের সহযোগিতা ও অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। কিন্তু, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরোধী। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে এই নরেন্দ্র মোদীর পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক আক্রমণে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছিল বিজেপি-আরএসএস। ভারতে তার নেতৃত্বে বিজেপি ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বিতাড়নের নামে বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এনআরসি-এর নামে আসামে ২০ লক্ষ নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এনআরসি বিরোধী আন্দোলন দমনে দিল্লীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো হয়েছে। ভারতে চলমান ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনসহ সেদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকার।
ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের শিরোমণি সাম্প্রদায়িকতাবাদী ফ্যাসিস্ট নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদ জানানো গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও আইনসঙ্গত অধিকার। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন ও বাম জোটের মোদীবিরোধী কর্মসূচিতে হামলা-বাধা প্রদান-গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে সরকার। একইসাথে তারা প্রমাণ করেছে, এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের স্বার্থের চাইতে মোদীর ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষায় ও ভারত সরকারের প্রিয়ভাজন হতে অধিক আগ্রহী।
(উৎস: সাম্যবাদ, এপ্রিল-মে ২০২১)