অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটি সারাদেশে অক্টোবর বিপ্লব উদযাপনের কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। ১২ জুলাই ২০১৭, বুধবার, সকাল ১১টায় রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনে অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ওই কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়। ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সালের অক্টোবর মাসে রুশ দেশে যে বিপ্লব ঘটেছিল তা পৃথিবীকে চমকে ও বদলে দিয়েছে। রাশিয়ার শ্রমিক-কৃষক মেহনতী মানুষ লেনিন ও বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, সমস্ত ক্ষমতা ধনিক শ্রেণীর পার্লামেন্টের হাতছাড়া হয়ে চলে গিয়েছিল তৃণমূল থেকে নির্বাচিত মেহনতী ও শোষিত-নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধিদের ‘সোভিয়েত’-এর কাছে। পুঁজিবাদী পথের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে মেহনতী মানুষের অভূতপূর্ব জাগরণ ও সৃষ্টিশীল শক্তির প্রকাশকে বিশ্ববাসী অপার বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছিল। শতাব্দী পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওই বিপ্লবের ঐতিহাসিক তাৎপর্য এক বিন্দুও মলিন হয় নি, বরং বর্তমান বিশ্বের গাঢ় অন্ধকারের পটভূমিতে তা আরও উজ্জ্বল ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
লিখিত বক্তব্যে অক্টোবর বিপ্লবের সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলা হয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধুমাত্র নিজস্ব সীমানার গন্ডির ভেতরের সাধারণ মানুষকে নতুন জীবনের আস্বাদ দেয় নি, বরং সারা বিশ্বের মেহনতী মানুষের সংগ্রামে আদর্শিক উদ্দীপনা জাগিয়েছে। ফ্যাসিস্ট হিটলার বাহিনীকে পরাজিত করে বিশ্বসভ্যতাকে নাৎসীবাদের ভয়াল কবল থেকে রক্ষা করেছে। দেশে দেশে মেহনতী মানুষের সংগ্রামকে সমর্থন করার পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদের অধীনস্ত দেশগুলোর জাতীয় মুক্তি সংগ্রামেও সোভিয়েত ইউনিয়ন রেখেছে সক্রিয় ভূমিকা। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকার কথা উঠে আসে পঠিত বক্তব্যে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৯ মে, ২০১৭, ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে “অক্টোবর বিপ্লব শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি”। এই কমিটি কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আগামী ১লা অক্টোবর, অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপনের কর্মসূচী শুরু হবে, ৭ই নভেম্বর একটি মহাসমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিলের মধ্য দিয়ে কর্মসূচী আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশের প্রগতিশীল শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেতমজুর-ছাত্র-যুব-নারী-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ঢাকায় সভা-সমাবেশ-প্রদর্শনী-সেমিনার-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানামাত্রিক কর্মসূচি পালন করবে। দেশে ইতিমধ্যেই যেসকল জায়গায় স্বতস্ফূর্তভাবে অক্টোবর বিপ্লবের উদ্যাপনের কমিটি গঠিত হয়েছে, কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেই সকল কার্যক্রমকে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানসর্বস্বতা নয়, বরং অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য সকল মানুষের কাছে তুলে ধরে এদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যেই এই জাতীয় কমিটি কর্মসূচি পালন করবে বলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।
আজফার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক হায়দার আকবর খান রনো, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী ও ফখরুদ্দিন কবির আতিক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, , গরিব মুক্তি আন্দোলনের নেতা শামসুজ্জামান মিলন, বাসদ (মাহবুব) কেন্দ্রীয় নেতা মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি পেশার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।