Monday, December 23, 2024
Homeফিচারসাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্কটাকে তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন

সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্কটাকে তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন

 [মামুনুর রশীদ। অভিনয় শিল্পী, নাট্য নির্দেশক। বাসদ (মার্কসবাদী)’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, এদেশের অনন্যসাধারণ কমিউনিস্ট বিপ্লবী কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী গত ৬ জুলাই ২০২১ তারিখে প্রয়াণের পর ২৪ জুলাই ২০২১ চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র—এর উদ্যোগে অনলাইনে আয়োজিত ‘সংশপ্তক বহমান’ শীর্ষক স্মরণসভায় মামুনুর রশীদ বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যটি পরবর্তীতে সম্পাদিতরূপে ‘কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ’—এ সংকলিত হয়। কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরা হলো]

 

হায়দার ভাইয়ের সাথে আমার খুব দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যে ছিল, তা নয়। তবে দু’টি অকেশানে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। এবং তার আগে তাঁর সম্পর্কে অনেককিছু শুনেছি। একটু আগে যিনি বললেন, তিনি আমার বন্ধু আমিরুল হক চৌধুরী। আমিরুল হক চৌধুরীর ইস্কাটনে একটি খাবারের দোকান ছিল। পরে একটা স্টুডিও ছিল। সেখানে উঁনি প্রায় নিয়মিতই আসতেন। খুব মিতভাষী, পাশে বসে থাকতেন। এবং আমি জিজ্ঞেস করতাম যে, ‘ওই ভদ্রলোক কে? এরকম একটা ব্যক্তিত্ব, মিতভাষী মানুষটা কে?’ তখন আমি জানতে পারি, আমিরুল হক চৌধুরীর দীর্ঘদিনের বন্ধু, উঁনি মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। পরবর্তীকালে দেখা—সাক্ষাৎ হলে দু’চারটে কথা হতো।

 

একবার বাসদ একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল নজরুলের উপর। সম্ভবত আমরা দু’জনই ওখানে বক্তা ছিলাম। তখন আরও গভীরভাবে তাঁকে জানতে পারি।

 

ড. আহমদ শরীফ সম্মাননা পেয়েছিলাম আমরা একইসাথে। উঁনিও পেয়েছিলেন, আমিও পেয়েছিলাম। এবং ওঁনার সঙ্গে তখন সেই পুরস্কার পাওয়ার পর সাধারণত যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়, সে প্রতিক্রিয়ায় তাঁর কথাবার্তা শুনেছি। শুনে মুগ্ধ হয়েছি। ঋদ্ধ হয়েছি।

 

এটা সমালোচনাই হয়ে যাবে, সাধারণত আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের যাঁরা নেতা এমনকি বামপন্থী নেতা, তারাও শিল্প—সাহিত্যের খোঁজ—খবর খুব একটা রাখেন না। এবং এগুলোকে খুব গুরুত্বপূর্ণও মনে করেন না। তো হায়দার ভাইকে দেখতাম–তাঁর সম্পর্কে যতটা শুনেছি, তাঁর যে কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জেনেছি–তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন। শরৎচন্দ্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রায়শই অনেকেরই কথা—বার্তা হয়েছে। শরৎচন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে, নজরুলের ভূমিকা নিয়ে। এ দু’জন বিশেষ মানুষকে নিয়ে অনেক আলোচনা হতো। এবং ‘বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল’—এর যে সুনাম, এই ‘চারণ’, চারণের কাজও ছিল, এই সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে নিয়ে একটা স্কোয়াড করা এবং নানানভাবে এই চিন্তাকে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া। এই যে মনোভাব, এই যে দৃষ্টিভঙ্গি, সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির যে সম্পর্ক এই সম্পর্কটাকে তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন। এবং এটা আমার খুব ভালো লাগত কারণ যখন আমি দেখেছি যে, আমাদের দেশের রাজনীতিকদের সময় নেই। সাহিত্য সম্পর্কে একেবারে কন্টেম্পরারি লেখাপড়া করা, সাহিত্য দিয়ে কী করে একটা আন্দোলন করা যায়, সমাজের ভেতরে ঢোকা যায়, সমাজকে চেনা যায়–এই বিষয়গুলো অন্যান্য রাজনৈতিক দলে যেমন গৌণ, সেরকমভাবে আমি দেখেছি যে, মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এই বিষয়গুলোকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন।

 

তিনি তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময় পশ্চিমবঙ্গে কাটিয়েছেন। সেখানকার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে এসে তিনি ‘বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল’—এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং সমাজতান্ত্রিক সাহিত্য এবং শিল্প–এগুলোর সাথে রাজনীতিকে মেলাবার একটা চেষ্টা করেছিলেন। কাজ করেছেন এবং আমৃত্যু তিনি আপোষহীনভাবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন।

 

ওঁনার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার নেই। তবে আমি একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসাবে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জানাই। যিনি আমাদেরকে বোঝার চেষ্টা করতেন এবং আমরা তাঁর কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আজকে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাই। এবং তিনি এই ‘চারণ’, যারা আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন, তাদের হৃদয়ে থাকবেন। এবং আমাদের হৃদয়ে, আমাদের সব স্মৃতিতে তিনি চিরজাগরূক হয়ে থাকবেন। ধন্যবাদ।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments