সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু এক যৌথ বিবৃতিতে সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় কমিটি আহুত হরতালে পুলিশি হামলা ও দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ সুন্দরবন এদেশের রক্ষা প্রাচীর। বাস্তুসংস্থানের আধার। গোটা বিশ্বে এরকম ম্যানগ্রোভ অদ্বিতীয়। অথচ সেই সুন্দরবনকে ধ্বংস করে সরকার সম্পূর্ণ গায়ের জোরে সুন্দরবনের অদূরে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ প্রকল্প গ্রহণের শুরু থেকেই দেশের সচেতন জনসাধারণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছে। দেশের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা শুধু নয়, খোদ ইউনেসকো পর্যন্ত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সরকার সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তকে অস্বীকার করে প্রকল্প বাস্তবায়নে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ ঢাকা শহরে অর্ধ বেলা হরতাল আহ্বান করা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক এই কর্মসূচিকে সরকার হরতালের শুরুতেই বানচাল করার চেষ্টা করেছে। ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় পুলিশ রাস্তায় দাড়িয়ে সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়নি। আর শাহবাগে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ হামলা করেছে। প্রায় দুই শতাধিক টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। হামলায় ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা নগর কমিটির সভাপতি কাকন বিশ্বাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়াও শাহবাগ থেকে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। আমরা এই পুলিশি হামলার নিন্দা ও গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করি।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, ‘ শুধু ঢাকার হরতালে নয়, হরতালের সমর্থনে সারাদেশের বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে। নোয়াখালীতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মিছিলে হামলা চালিয়ে ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সভাপতি মোবারক করিম, নোয়াখালী সরকারি কলেজ কমিটির সভাপতি ফরহাদ, সদস্য সুমনসহ ৫জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। পুলিশ দিয়ে গণতান্ত্রিক এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের বহিঃপ্রকাশ। সরকার একদিকে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করছে। আর অন্যদিকে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রতিবাদ করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার কেড়ে নিচ্ছে । এই হল অনির্বাচিত সরকারের গণতন্ত্রের নমুনা! সরকারের অবস্থান বা ব্যাখ্যাই যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আন্দোলনকে এত ভয় কেন? বাস্তবে এটাই প্রমাণ করে সরকার একদিকে মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে অন্যদিকে যারা এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে লড়ছে মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের উপর খড়গহস্ত হচ্ছে। কিন্তু শাহবাগে আজকে শিক্ষার্থীদের অকুতোভয় সাহসী লড়াইয়ে আশা করি সরকারের বোধোদয় হবে যে কোনো অত্যাচার-নিপীড়নেই এই আন্দোলন দমন করা যাবে না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।’ আজকের কর্মসূচি থেকে প্রগতিশীল ছাত্র জোট আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে সেই কর্মসূচির প্রতি সংহতিজ্ঞাপন ও সর্বাত্মক লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।