ভোটের স্বার্থে মৌলবাদ তোষণনীতির পরিণতি হবে দেশের জন্য ভয়াবহ
গত রাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভার্ষ্কয অপসারণের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র উদ্দ্যোগে ২৬ মে ২০১৭ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কমরেড আলমগীর হোসনে দুলাল, মানস নন্দী, উজ্জল রায় ও ফখরুদ্দিন কবির আতিক।
বক্তারা বলেন, “মহাজোট সরকার একদিকে দ্রব্যমূল্য, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য, ভ্যাট ইত্যাদি বাড়িয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধসহ দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত আধুনিক -গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর একের পর এক আঘাত নামিয়ে আনছে। যে দেশের মানুষ একদিন পাকিস্তানীদের ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়েছে, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সেই দেশে আজ মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মুখোশ পরে সরকার আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে দমন-পীড়নমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি ভোটের স্বার্থে মৌলবাদী শক্তির প্রতি যে নির্লজ্জ তোষণনীতি চলছে, অদূর ভবিষ্যতে তা এক ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষদের আজ সরকারের ফ্যাসিবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে”।
বক্তারা আরো বলেন, “ভাস্কর্যকে কোন গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষই ধর্মবোধ থেকে বিবেচনা করে না। ভার্স্কয মানুষের শিল্পবোধের নান্দনিক প্রকাশ। কান্তজীর মন্দির বা ময়নামতির বিহারকে যে কোন মানুষই হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বিশ্বাসী চেতনার বাইরে গিয়ে আমাদের পূর্বসূরীদের স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন বা জ্ঞানচর্চার গৌরবময় কীর্তি ও ইতিহাস হিসেবে বিবেচনা করে। মিশরের মুসলমানরা ফারাও রাজাদের পৌত্তলিকতার নিদর্শন বলে পিরামিড গুড়িয়ে দেয়না, মনুষ্যকীর্তির অন্যতম আশ্চর্য হিসেবে তুলে ধরে। কেবল খাওয়া পরার মধ্যেই মানুষের জীবন আটকে থাকলে, ভাবগত উৎপাদন না হলে, সভ্যতা আজকের অবস্থানে আসত না। মৌলবাদীরা সভ্যতাকে পিছনের দিকে নিতে চায়। আর তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার (?) ভোটের স্বার্থে সভ্যতার অর্জন বিসর্জন দিতেও পিছপা হয় না। জনবিরোধী কর্মকান্ডের আড়াল নিতে জনগণকে বিভক্ত করে, ধর্মব্যবসায়ীদের ‘ধর্ম গেল, ধর্ম গেল’ রবকে উস্কানী দেয়, কিংবা তাদের এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করে”।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন,‘ধর্মপ্রাণ মানুষদের আমরা ভাবতে বলি, মানুষ না খেয়ে থাকলে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও ও পাচার হলে, অধিকার বঞ্চিত হলে, ন্যায্য মজুরি না পেলে কি ধর্ম থাকে? দেশে যখন অব্যাহত ভাবে নারী নির্যাতন চলছে, বাবা মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করছে- এসব প্রতিকারের দাবি মৌলবাদী শক্তির নেই। তাদের ধর্ম রক্ষা কেবল ভার্স্কয সরানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ’।
নেতৃবৃন্দ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ভাস্কর্য স্বস্থানে স্থাপনের দাবি জানান এবং আজ সকালে প্রগতিমনা ছাত্র জনতার মিছেলে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও গ্রেফতারের নিন্দা জানানো হয়। পুলিশের হামলায় গুরতর আহত হয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মুক্তা ভট্টাচার্য, সঞ্জয় কান্ত দাস ও শামিম আরা মিনা। সমাবেশে হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির জোর দাবি জানানো হয়।