বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)‘র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ এক বিবৃতিতে জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতার কথা বলে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মার্কিন সমর্থিত ‘ইসলামী সামরিক জোট’-এ বাংলাদেশের যোগ দেয়ার ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ও আতঙ্ক বিস্তারের অপরাজনীতির সাথে বাংলাদেশের মহাজোট সরকার নিজেকে যুক্ত করলো।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে কোন ইসলামী রাষ্ট্র নয়। শুধুমাত্র মুসলিম দেশের অংশগ্রহণে কোন মোর্চায় যোগদান রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির পরিপন্থী, যা এমনকি বর্তমান সংবিধানেও উল্লিখিত আছে। তিনি আরো বলেন – সৌদি আরব একটি প্রতিক্রিয়াশীল মধ্যযুগীয় রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। সৌদি রাজপরিবার ইসলামী জিহাদী গোষ্ঠীগুলোর মতাদর্শ ওহাবীবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, যারা গণতন্ত্র-নারী অধিকার-অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি আধুনিক ধ্যান-ধারণার বিরোধী। বর্তমানে সৌদি সরকার শিয়া বিদ্রোহীদের দমনের নামে ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন ও বিমান হামলার মাধ্যমে গণহত্যা চালাচ্ছে। সিরিয়ায় আসাদবিরোধীদের সাহায্যের নামে আলকায়েদা সমর্থিত আল-নুসরা ফ্রন্টসহ অন্যান্য সুন্নী সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীকে অস্ত্র ও অর্থ যোগাচ্ছে। ইরাকেও অনুরুপ ভূমিকা পালন করছে। এভাবে সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতার, কুয়েত, জর্ডান, আরব আমীরাত, তুরস্ক, মিশর ইত্যাদি প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র শিয়া-সুন্নী সাম্প্রদায়িক সংঘাতকে উস্কে দিয়েছে ও নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে সুন্নী জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে শক্তিশালী করে আজ তাদের আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের আগ্রাসন ও এইসব আরব মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতায় ইরাক-সিরিয়া-লিবিয়ায় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সুযোগে সেখানে আইএস আজ তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার নামে বর্বরতা চালাচ্ছে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলার নামে আল কায়েদা ও তালেবানের উত্থানের পেছনেও সৌদিসহ আরব রাজতন্ত্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পকিস্তানের ভূমিকার কথা সবাই জানে।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, আজ বিরোধ সৃষ্টি হলেও যে সৌদি আরব নিজেই একসময় ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়েছে ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী কূট-চক্রান্তের সহযোগী, তার নেতৃত্বে মৌলবাদবিরোধী সংগ্রাম সোনার পাথরবাটি ছাড়া কিছু নয়। উপরন্তু এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে সৌদি আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী অপতৎপরতার শরীকে পরিণত হয়ে বিপদের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বাংলাদেশ। তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত এই জোটে যোগদানের পেছনে জনগণের ও দেশের কোন স্বার্থ নেই। অনির্বাচিত ও জনসমর্থনহীন মহাজোট সরকার সৌদি আরব ও মার্কিনীদের খুশি করতে এবং তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অংশীদার হিসেবে নিজের ক্ষমতায় থাকা দীর্ঘায়িত করতে এই জোটে যোগ দিতে সম্মতি দিয়েছে। রাজনৈতিক সমর্থন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুবিধার বিনিময়ে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ ও দেশকে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অংশীদার করার ম্যান্ডেট জনগণ সরকারকে দেয়নি।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী জনসাধারণের প্রতি মহাজোট সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং মৌলবাদবিরোধী আদর্শিক-সাংস্কৃতিক সংগ্রাম গড়ে তোলার পাশাপাশি জঙ্গীবাদের উত্থানের পেছনে সাম্রাজ্যবাদ ও গণবিরোধী শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।