বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরি সৌদি আরবের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্বাক্ষরের তীব্র সমালোচনা করে সংবাদ মাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একটা সময়ে সৌদি আরব সফরে গেছেন যখন সৌদি রাজতন্ত্রের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ার মানুষ ধিক্কার জানাচ্ছে । অতি সম্প্রতি সৌদি রাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনায় সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, গত কয়েক বছর যাবৎ সৌদি আরব ইয়েমেনে এক নৃশংস যুদ্ধ চালাচ্ছে, শিশুদের স্কুলবাসে পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করছে। সৌদি আরবের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের কারণে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে ইয়েমেন।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরি বলেন, “জামাল খাসোগি ছিলেন সৌদি সাংবাদিক। তিনি তার লেখায় সৌদি রাজপরিবারের সমালোচনা করতেন। ইয়েমেনে সৌদি হস্তক্ষেপেরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। চলতি বছরের মে মাসে সৌদি নারী মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার করলে কড়া সমালোচনা করেন জামাল খাসোগি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সৌদি আরব থেকে পালিয়ে চলে আসেন ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে শুরু করেন। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে যাওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ। গোটা বিশ্ব এ ব্যাপারে একমত যে সৌদি দূতাবাসে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। সব মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের। অথচ এ সময় আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করছেন। ভোটের আগে তিনি জনগণকে মুসলিম বিশ্বে তার অবস্থান দেখাতে চান। এতবড় নির্লজ্জ সমর্থন আর কেউ এ সময়ে সৌদি আরবকে দিচ্ছে না। অথচ, ঘটনার ভয়াবহতা ও গোটা বিশ্বের মানুষের প্রতিক্রিয়া এমন যে, যে সব সম্রাজ্যবাদী দেশের মদদে সৌদি রাজতন্ত্র এ সব অমানবিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে তারা পর্যন্ত আগামী ২৩-২৫ অক্টোবর সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার কথা জানিয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী। টেনিস খেলোয়াড় নাদাল ও জকোভিচ খেলা বাদ দিয়ে সৌদি আরব থেকে ফিরছেন। প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যসংক্রান্ত যে সকল সমঝোতা স্মারক প্রধানমন্ত্রী সফরকালে স্বাক্ষর করবেন তার কোনটাই এই প্রতিবাদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরি প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সৌদি আরবের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এর আগে সৌদি আরবের নেতৃত্বে আইএস বিরোধী জোটে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ। কথা ছিল জোটে যোগ দিলেও লড়াইয়ের মাঠে বাংলাদেশ নামবে না। অথচ এখন এই জোটের গবেষণা, তদন্তকাজসহ মাঝারি স্তরে জনবল নিয়োগ করতে চাইছে সৌদি সরকার। পাশাপাশি তাদের ভূখন্ড থেকে মাইন অপসারণ, সীমান্তসুরক্ষা ও নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইছে সৌদি আরব। ইয়েমেনে অভিযান শুরুর পর যেখানে সৌদি আরবের ভূমিকার সমালোচনা করে দুইবার জাতিসংঘে প্রস্তাব নেয়া হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সৌদি আরবের প্রতিরক্ষায় সহযোগী হতে চাইছে — এ ঘটনা নিন্দনীয়। প্রতিবেশী কাতারের সঙ্গেও সৌদি আরব বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। সিরিয়া, প্যালেস্টাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইস্যুতে সৌদি আরবের ভূমিকা এখন বিতর্কিত। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের উত্থান, ইরানের সঙ্গে বিরোধ — এই সবকিছুর মূলে শিয়া আর সুন্নি বিভাজনের জন্য দায়ী করা হয় সৌদি আরবকে। এমন এক প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষার কোনো উদ্যোগে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।”