Monday, December 23, 2024
Homeফিচারস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ ও ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ

IMG_7279 (1)

“ভেনেজুয়েলার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে উৎখাতের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র এক অংশের অভ্যুত্থান চেষ্টার সমর্থনে বিরোধী এক নেতার নিজেকে ‘অন্তর্বর্তকালীন প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো কর্তৃক সাথে সাথেই এই অনির্বাচিত স্বঘোষিত ‘প্রেসিডেন্ট’কে স্বীকৃতি দেয়া – বিশ্বরাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কঠোরতা বাড়িয়ে, বিদেশী ব্যাংকে রাখা ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তহবিল অবৈধভাবে জব্দ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মাদুরো সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বশংবদ সরকার বসিয়ে বিশাল তেলভান্ডারসহ ভেনেজুয়েলার সম্পদ লুট করা এবং ল্যাটিন আমেরিকায় কিউবার প্রভাবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও বামপন্থী আন্দোলনের উত্থান রোধ করে ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে তারা এর আগেও ভেনেজুয়েলার জনপ্রিয় নেতা হুগো শ্যাভেজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে। সাম্রাজ্যবাদীদের এই হীন চক্রান্তমূলক প্রচেষ্টা সফল হলে বিশ্বব্যাপী দুর্বল ও ছোট দেশগুলোর জাতীয় স্বাধীনতা, জনগণের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র ভবিষ্যতে আরো বেশি বিপন্ন হবে। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই ভেনেজুয়েলার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই – ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বা রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণের অধিকার রাখে কেবলমাত্র সেদেশের জনগণ, সাম্রাজ্যবাদীরা নয়।” ঢাকায় এক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাসদ (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এসব কথা বলেন।  ১লা ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আয়োজিত এই সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কমরেডস শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, আলমগীর হোসেন দুলাল, মানস নন্দী, উজ্জ্বল রায়, ফখরুদ্দিন কবির আতিক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে সাম্রাজ্যবাদের শিরোমণি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকায় অগ্নিসংযোগ করে ঘৃণা জানানো হয়। এরপর একটি প্রতিবাদ মিছিল রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “শ্যাভেজ ও মাদুরোর ‘অপরাধ’ হল – তারা সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে মাথা নত করেননি। তারা বিদেশি কোম্পানি ও দেশীয় ধনিকশ্রেণীর হাত থেকে মুক্ত করে দেশের তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেছেন। ধনীদের মুনাফা লোটার সুযোগ সীমিত করে গরীব মানুষের কল্যাণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়িয়েছেন। ল্যাটিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোর মত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর ঋণ নিয়ে বহুজাতিক পুঁজির স্বার্থে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এর পথে তাঁরা হাঁটেননি। সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন জাতীয় বিকাশ ও জনকল্যাণমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। কিউবা, বলিভিয়াসহ আরো কিছু দেশের সাথে মিলে ল্যাটিন আমেরিকার জন্য বিকল্প ব্যাংকিং, বাণিজ্য ও মুদ্রাব্যবস্থা গড়ে তোলার অন্যতম উদ্যোক্তা ভেনেজুয়েলা। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিনীদের চক্ষুশূল দেশটি। সাম্প্রতিককালে রাজস্বের প্রধান উৎস তেলের দাম কমে যাওয়া, মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধসহ নানা কারণে অর্থনৈতিক সংকট ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে চলছে ভেনেজুয়েলা। এই সুযোগে দেশের ধনিকগোষ্ঠীর একাংশের সমর্থনপুষ্ট বিরোধী দলগুলো মার্কিন সহযোগিতায় সহিংস বিক্ষোভ করে আসছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের অপছন্দের ‘শাসক পরিবর্তনের’এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। একই ঘটনা ঘটাতে গিয়ে তারা ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে দেশগুলোকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। ভেনেজুয়েলায় সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী সরকারকে মদদ দিয়ে এদেশের সম্পদ লুট করছে ভারত-চীন-রাশিয়া-আমেরিকাসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো। মার্কিন-ইউরোপীয়রা এদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবক দিচ্ছে। অথচ বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচারী সরকার, সামরিক শাসক, এমনকি রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক তারা। বাংলাদেশের হাসিনা সরকারও প্রতিক্রিয়াশীল সৌদি রাজতন্ত্রের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা স্মারক ও সামরিক জোট করে ইয়েমেনে গণহত্যাকে সমর্থন যোগাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনতাকে সাম্রাজ্যবাদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধা এই গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

IMG_7312

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments