গতকাল ৭ জুন খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে কল্পনা চাকমার অপহরণের ২১তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিছিলে পুলিশ ও বিডিআর-এর হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।
সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘২১ বছর আগে অপহৃত কল্পনা চাকমার হদিস জানাতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করা দূরে থাক; উল্টো গতকালের মিছিলে হামলার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, প্রশাসন গায়ের জোরে অতীতের সেই বর্বরতা ও কলঙ্কের ইতিহাস ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। ইতিপূর্বে নানা সংবাদমাধ্যম সূত্রে এ ঘটনার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কথা জানা গেছে। সেনাবাহিনীর কোন কোন অফিসার তাতে যুক্ত ছিল, সেসব নামও এসেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো বিচারিক তৎপরতা অগ্রসর হয়নি। বরং চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কি তাহলে এটাই মনে করে — সেনাবাহিনী কোনো অন্যায় করলেও তা অন্যায় বলে গণ্য হবে না? তার বিচার চাওয়া যাবে না?
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যেকোন ন্যায়সঙ্গত দাবিতে মানুষ প্রতিবাদ করবে — গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটা স্বীকৃত বিষয়। এজন্য পুলিশের কোনো পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয় না। নির্দিষ্ট কোনো সভাস্থল যেখানে বিভিন্ন দল বা সংগঠন সভা করে, তার জন্যই কেবল নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে জানিয়ে রাখতে হয়। পুলিশ যে যুক্তিতে হামলা করেছে তা অন্যায্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর একের পর এক নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণ তো প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনা। রোমেল চাকমাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তুলে নিয়ে হত্যার পরও আজ পর্যন্ত কোনো তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লংগদুতে পুলিশের সামনেই লাশবাহী মিছিল থেকে ছুটে গিয়ে যেভাবে পাহাড়ীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হলো, তাতেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণিত। বিবেকবান মানুষদের আমরা ভাবতে বলি, পাহাড়ে হিংসার আগুন জ্বালালো কারা? পাহাড়িরা এদেশেরই নাগরিক। কিন্তু তাদের জাতিগত স্বাতন্ত্র্যকে এদেশের শাসকরা বারবার অস্বীকার করেছে। দমনপীড়নের মাধ্যমে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি-বাঙালি কিংবা পাহাড়ি-পাহাড়ি বিরোধ উস্কে দিয়ে পারস্পরিক বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব তৈরি করে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যে ন্যায়-অন্যায়ের বিবেকবোধও হারিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ বাঙালি শত্রুজ্ঞান করছে পাহাড়ি সাধারণ মানুষকে। এ বিভেদ ও অনৈক্য জিইয়ে রেখে স্বার্থ হাসিল করছে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী।
সমতলের মানুষেরও আজ বোঝা দরকার, যে দমন-পীড়নমূলক ব্যবস্থার মধ্যে আপনারা প্রতিনিয়ত অধিকার হারাচ্ছেন, পাহাড়িরাও একইভাবে বঞ্চনার শিকার। আপনাদের মধ্যে সমস্বার্থবোধ যাতে না জাগে সেজন্য বিভেদমূলক নানা অপতৎপরতা চলছে। ফলে মুক্তিকামী জনগণকে নিজেদের অধিকার নিয়ে লড়বার পাশাপাশি নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের সংগ্রামের পাশে দাঁড়াতে হবে।’