রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসান চাই
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, “২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মৌলবাদী গোষ্ঠী পরিচালিত গ্রেনেড হামলায় সেসময় ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের একটি অংশ যেভাবে মদদ দিয়েছিল তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অশুভ কালো অধ্যায় রচনা করেছিল।তৎকালীন বিএনপি সরকার ২১ আগস্ট নৃশংস হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারে না শুধু নয়, তারা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও নিষ্ঠুরভাবে এর জন্য হামলার শিকার আওয়ামী লীগকেই এর জন্য দায়ী করেছিল, জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল, গ্রেনেড সরবরাহকারী মাওলানা তাজউদ্দিনকে দেশ ছেড়ে পালাতে সাহায্য করেছিল, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি গোপন করেছিল। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ পদাধিকারীরা শাসক দলের প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতে এসব কাজে সাহায্য করেছিলেন।গণবিরোধী শাসকদের হাতে রাষ্ট্রশক্তি কিভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ড ব্যবহৃত হয় তা এখান থেকে বোঝা যায়। ফলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসানে ওই বর্বরোচিত হামলায় অংশগ্রহণকারী, নেপথ্যে মদদদাতা ও সহায়তাকারী সকলের বিচার ও শাস্তি যেকোন বিবেকবান মানুষের কাম্য। বিলম্বে হলেও এ মামলার রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অন্ততঃ একধাপ অগ্রগতি ঘটাবে – এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, “কিন্তু, একইসাথে আমরা বলতে চাই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধী দলকে দমন ও নিছক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ মামলার রায়কে দেখছে বলে জনমনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় দেশ চালাতে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিনা বিচারে হত্যা-গুম-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা ও ষড়যন্ত্রের একই পথ অনুসরণ করছে। এই সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের ত্বকী, সাংবাদিক সাগর-রুনি, বিএনপি-র ইলিয়াস আলী, কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুসহ অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যা-গুমের বিচার হয়নি। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা জেনারেল মঞ্জুরহত্যা মামলা, পল্টনে সিপিবি-র সমাবেশে ও রমনা বটমূলে নৃশংস বোমা হামলা ইত্যাদি সুরাহার কোনো লক্ষণ এখনো নেই।রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় নির্মূল করার ফ্যাসিবাদী মানসিকতা বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডেও প্রতিফলিত হচ্ছে। বিচারব্যবস্থা-প্রশাসন-পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্তমানে যেভাবে দলীয়করণ, নিয়ন্ত্রণ ও গণতান্ত্রিক অধিকারহরণে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নজিরবিহীন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত কালো আইন করে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই অগণতান্ত্রিক ভূমিকা ও চরিত্রই মামলার রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং বিএনপি-র মধ্যে যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাথে যুক্ত ছিলেন বা হামলাকারীদেরআড়াল করেছেন তাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের ক্ষেত্র তৈরি করছে।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, “দেশে যখন অগণতান্ত্রিক শাসন চলে, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না — তখন সেই ব্যবস্থার অধীনে যে কোন বিচারের পশ্চাতে শাসকদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেশের জনসাধারণকে বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগ-বিএনপি এসব ধনিকশ্রেণীর দলগুলো আজ আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সত্যিকার অর্থে ধারণ করে না। বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার পুরোপুরি হরণ করে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক শাসন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বুর্জোয়া সংসদীয় পদ্ধতিকেও অকার্যকর করে তুলেছে। ফলে আওয়ামী স্বৈরতান্ত্রিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় বামপন্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের পথেই জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।”