Monday, December 23, 2024
HomeUncategorized৫ দফা দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) দলের স্মারকলিপি পেশ

৫ দফা দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) দলের স্মারকলিপি পেশ

পল্টন মোড়ে একজন যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে সিএনজি থামিয়ে একদৃষ্টে বাসদ (মার্কসবাদী) দলের কর্মীদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন চালক। একজন ৫ দফা দাবি ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। জনাদশেক কর্মী পথচলতি মানুষের কাছে আবেদন করছেন। অনেকে দাঁড়াচ্ছেন, স্বাক্ষর দিচ্ছেন। মিনিট পাঁচেক দেখে সিএনজি চালিয়ে চলে যাচ্ছিলেন অন্য যাত্রীর খোঁজে। কিছুটা এগিয়ে গাড়ির ব্রেক কষলেন। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে স্বাক্ষর নেয়া এক কর্মীকে ডাকলেন। হাত বাড়িয়ে বোর্ডটা নিয়ে স্বাক্ষর দিলেন। বললেন, আপনারা খুব ভাল কাজ করছেন। কিন্তু পারবেন তো?
খিলগাঁ থাকেন গৃহিণী আমেনা বেগম। তালতলা মার্কেটের সামনে স্বাক্ষর সংগ্রহের সময় মাইকে দ্রব্যমূল্য কমানো ও রেশনের দাবি শুনে ছুটে এলেন। স্বাক্ষর দিয়ে বললেন, “চলে যাচ্ছিলাম। আপনাদের বক্তব্য শুনে ঘুরে আসলাম। আপনাদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। এ দাবিতে এই এলাকায় পরবর্তীতে কোন কর্মসূচী নিলে আমাকে ডাকবেন। আমি থাকব। আমরা আর টিকতে পারছি না।”
নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বজনীন রেশন চালু করা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করা, কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রদান, সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করাÑ এই ৫ দফা দাবি ছিল বাসদ (মার্কসবাদী)র। গত তিনমাস ধরে চলেছে স্বাক্ষর সংগ্রহ। এ সময়ে এ ধরনের অসংখ্য অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। ঢাকার এক কর্মী অন্য একটি কর্মসূচিতে কাজে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। অপরিচিত এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আপা আজ স্বাক্ষর সংগ্রহ করবেন না? কথা বলার পর জানা গেল তিনি এই এলাকায়ই কাজ করেন। আগেই স্বাক্ষর করেছেন। স্বাক্ষরশিট আর প্রচারপত্র নিয়ে দলের কর্মীদের একের পর এক এলাকায় ছুটে বেড়ানো দেখেছেন।
কড়াইলে স্বাক্ষর সংগ্রহের সময় সামনে দাঁড়ালেন এক যুবক। বললেন, আমি এরকমই কিছু একটা খুঁজছিলাম, যারা রাস্তায় আছে, মানুষের কাছে যাচ্ছে। তিনি একটা ট্রাভেল এজন্সিতে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি তার সহকর্মী ও মেসের বন্ধুদের নিয়ে চলে আসেন সমাপনী সমাবেশে।
একইধরনের অভিজ্ঞতা চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায়। মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন মন খুলে, বিশেষ করে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত মানুষ।
আবার এই স্বাক্ষর সংগ্রহ অতটা মসৃণও ছিল না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাÑ স্থানে স্থানে বাধা দিয়েছে। ঢাকায় মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড়, দৈনিক বাংলা, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, খিলগাঁওÑ প্রায় সকল জায়গায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। লালবাগে প্রথমে পুলিশ, তারপর স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দলবল নিয়ে বাধা দিয়েছেন। মাইক ভেঙে ফেলতে উদ্যত হয়েছেন। শুক্রাবাদ বাজারে স্বাক্ষর সংগ্রহের সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্মীদের ধরে নিয়ে পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কার্যালয়ে আটকে রেখেছে। স্বাক্ষরশিট ছিনিয়ে নিয়েছে। কলাবাগানে পোস্টার লাগানোর সময় পুলিশ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা বাধা দিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এইসকল বাধা সত্ত্বেও স্বাক্ষর সংগ্রহ চলতে থাকে। ৫ এপ্রিল সকাল ১১টায় পল্টন মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রিয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য্যরে পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নির্বাহী ফোরামের সদস্য ও বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত, কেন্দ্রিয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য রাজু আহমেদ, রাশেদ শাহরিয়ার এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রিয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এই সমাবেশে দলের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবিতে সারাদেশে গণকমিটি গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়। সারাদেশে যে সকল মানুষ এই দাবিগুলোকে সমর্থন করে স্বাক্ষর দিয়েছেন, যারা স্বাক্ষর না দিলেও এই দাবি সমর্থন করেনÑ সবাইকে এই গণকমিটিতে সংযুক্ত হওয়ার আহবান জানানো হয়। এই গণকমিটিগুলো হলো জনগণের সংগ্রামের নিজস্ব শক্তি। এই কমিটিগুলোর নেতৃত্বে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সকল গণতান্ত্রিক দাবি আদায় ও রক্ষা করতে হবে।

 

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments