গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা তিস্তা থেকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার বন্ধ ও তিস্তাসহ অভিন্ন সব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করার দাবীতে এক রোড মার্চ কর্মসূচী দিয়েছে।
আগামী ৮ এপ্রিল ‘তিস্তা বাঁচাও-কৃষি ও কৃষক বাঁচাও-দেশ বাঁচাও’ শ্লোগানে এই রোড মার্চ ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে ১০ এপ্রিল তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্ট পৌছাবে। রোড মাচর্ শেষে ও দিন সেখানে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
এই কর্মসূচী সফল করার আহ্বান জানিয়ে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রচার পত্রে বলা হয়, স্মরণকালের ভয়াবহ পানি সঙ্কটে আমাদের তিস্তা নদী। পানির অভাবে ঐ নদীর পাড়ের ১২টি উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ চরম বিপর্যয়ের মুখে। পানির অভাবে অনেক জমিতে এখন আর বোরো চাষ করতে পারছেন না। এর ফলে ঐ বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষকসহ কৃষির সাথে যুক্ত বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। তিস্তার পানি বন্টনে ভারতের সাথে কোন সমাধান হয়নি। ভারতের কাছ থেকে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ করে ছিলেন ১৯৭৬ সালে।
ভারতের কুচবিহারের গজলডোবায় তিস্তার ব্যারেজের সকল গেইট বন্ধ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষিখাতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা দূরে থাক, আগে যে পানিটুকু পাওয়া যেত তাও এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে আমাদের দেশে সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প-তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় তিস্তায় পানি না থাকায় এ অঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, দুধুকুমর, কুড়ি, তিস্তাসহ প্রায় ৩৩টি ছোট বড় নদ নদী ভরাট হয়ে গেছে। রংপুর অঞ্চল ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। বর্তমানে তিস্তায় পানির প্রবাহ মাত্র ৫০০ কিউসেভ। অথচ গত বছর এ শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ ছিল ৫০০০ কিউসেভ। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে ভারত-বাংলাদেশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিস্তার পানির ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ, ৩৯ শতাংশ ভারত, বাকি ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত থাকার কথা থাকলেও তা ভারতের কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির বিষয়ে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরোধীতাকে অজুহাত হিসাবে দাঁড় করিয়ে ভারত সরকার চুক্তি করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এক সাথে অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে ৫১টি নদীর উজানে ভারত অসংখ্য বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যারের ফলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন মরুকরণের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এর পরিণতিতে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা, জীববৈচিত্র ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।
তিস্তার পানি পাওয়া আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইনও এক্ষেত্রে আমাদের ক্ষে। হেলসিংকি নীতিমালা অনুসারে প্রতিটি নদী তীরবর্তী রাষ্ট্র তার সীমানায় পানি সম্পদের ব্যবহারের অধিকার ভোগ করবে যুক্তি ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। পানি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সংশিষ্ট সবার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। কিন্তু তিস্তার পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারত তা আমলে নেয়া প্রয়োজন বোধ করছে না। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ জলপ্রবাহ কনভেনশনে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার নীতিমালা গ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, খালেদা, এরশাদসহ সকল সরকার গত ৪২ বছরে দেশের স্বার্থে তিস্তাসহ অভিনড়ব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কোন দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেনি। ভারতের মদদ নিয়ে ক্ষমতায় থেকে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে তারা চুক্তি করেছে; যার মধ্যে ২০১০ সালে হাসিনা-মনমোহন গোপন চুক্তি, ট্রানজিটের নামে করিডর প্রদান করে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর এবং আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ভারতের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন প্রদান, সন্ত্রাস দমনের নামে আঞ্চলিক টাস্কফোর্স গঠন করে আমাদের দেশে ভারতের সামরিক উপস্থিতির সুযোগ করে দেওয়া, বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবন ধ্বংস করে ভারতের স্বার্থে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি এবং সমুদ্রের দু’টি গ্যাস বক ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে ভারতে কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে শেখ হাসিনা সরকারকে ভারতের সাথে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করে স্বাধীন অবস্থান থেকে জোরালো কুটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখা এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থায় তিস্তার পানি বণ্টনের সমস্যাটি তুলে ধরা এখন সময়ের জরুরী দাবী। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে তিস্তাসহ অভিনড়ব ৫৪টি নদী বাঁচাতে পানির ন্যায্য পাওনা আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে সোচ্চার হওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। এর পাশাপাশি আমরা ভারতের গণতন্ত্রমনা জনগণকে সংকট সমাধানে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
সে লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে আগামী ৮-১০ এপ্রিল’ ২০১৪ ঢাকা থেকে নীলফামারীর তিস্তা ডালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত রোডমার্চ সফল করার জন্য সচেতন দেশবাসীর অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোড মার্চ উদ্বোধন
৮ এপ্রিল’২০১৪, মঙ্গলবার
সকাল ৯ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সকাল ১১ টায় জয়দেবপুর চৌরাস্তা, দুপুর ১ টায়
টাঙ্গাইল, দুপুর ৩ টায় হাটিকুমরুল মোড়, বিকাল ৫ টায় বগুড়ার সাতমাথায় জনসভা
৯ এপ্রিল’২০১৪, বুধবার
সকাল ৯ টায় বগুড়া থেকে যাত্রাশুরু, সকাল ১১ টায় গোবিন্দগঞ্জ, দুপুর ১২.৩০মিঃ
পলাশবাড়ি, দুপুর ৩ টায় শটিবাড়ি, বিকাল ৫ টায় রংপুর পায়রা চত্ত্বরে জনসভা
১০ এপ্রিল’২০১৪, বৃহস্পতিবার
সকাল ৯ টায় রংপুর থেকে যাত্রাশুরু, পথে পথে সমাবেশ শেষে বিকাল
৩.৩০ মিঃ ডালিয়া পয়েন্টে জনসভা