প্রহসনমূলক একতরফা নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে যশোর, দিনাজপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ঘটে চলেছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। বাড়িঘরে আগুন দেয়া, লুটপাট, মন্দিরে আগুন দেয়ার মতো ঘটনার পাশাপাশি নারী ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঋষিপাড়ায় দুই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্ত ও সাধারণ মর্জিনা খাতুন এক যৌথ বিবৃতিতে এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন।
আজ ১৩ জানুয়ারি সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সব ঘটনা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। প্রতিবার নির্বাচনের আগে এবং পরে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা বহির্ভূত সকল বুর্জোয়া ও সাম্প্রদায়িক দলের নিপীড়নের শিকার হয় হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এই সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে মনে করে তাদের ভোট ব্যাংক, আবার কোনো কোনো দল মনে করে তাদের নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য এরাই দায়ী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পাকিস্তানি প্রায়-ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ধর্মের নামে যে নিপীড়ন ও শোষণ চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েই আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা তথা রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক করার আকাঙ্ক্ষা ও চেতনা গড়ে তুলে ছিলাম। যে কারণে স্বাধীন দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের শাসকগোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা ও ভোটের রাজনীতির স্বার্থে ধর্মকে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে যুক্ত করেছে। আর সে কারণেই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার মধ্য দিয়ে অন্যান্য সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনোটিরই সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার হয়নি। বরং বারে বারেই প্রতিটি ঘটনায় সম্প্রদায়িক দলগুলির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্যাতিতদের বর্ণনা থেকে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিতেও বিএনপি-জামাতের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার কথা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী এও জানতে পেরেছে যে সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিহক করতে স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজ ব্যবস্থায় যে কোনো সহিংসতা এবং নিপীড়নের নির্মম শিকার দেশের নারী এবং শিশুরা। যশোর ও দেশের আরো কয়েকটি স্থানে নারী ধর্ষণের ঘটনা তাই প্রমাণ করেছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এ সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং সহিংসতা বন্ধ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি/ তারিখ : ১৩ জানুয়ারি ২০১৪