আজ ২১ জানুয়ারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৩ দশক পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রসভা ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত কয়েকশত শিক্ষার্থী এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রাক্তন নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে দুপুর ১২টায় এক বর্ণাঢ্য র্যালি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ছাত্রসভায় বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক আ ক ম জহিরুল ইসলাম, স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সভাপতি বেলাল চৌধুরী, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, ঢাকা নগর শাখার সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, সাধারণ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী।
আলোচনা সভায় জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে জর্জরিত বাংলাদেশ। যশোরের অভয়নগর, সাতক্ষীরা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে। শাসকশ্রেণীর প্রত্যক্ষ মদদে আজ সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষের অসংগঠিত অবস্থা আর অজ্ঞানতার কারণে শাসকরা প্রতিনিয়ত শোষণ ও বিভ্রান্ত করতে পারছে। এরা সংখ্যালঘুদের মানুষ নয় ভোটার হিসেবে বিবেচনা করে। শাসকশ্রেণী শোষণমূলক ব্যবস্থা টিকে রাখার জন্যই সাম্প্রদায়িকতা বিভেদ বৈষম্যকে জিইয়ে রাখে। এই সত্য বুঝতে পেরেই ১৯৮৪ সালে সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করেছিল।’
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুজ্জামান সাকন বলেন, ‘১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি একটি সার্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেকুলার, একই পদ্ধতির, গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের সংগঠন যাত্রা শুরু করেছিল। এই দাবি এদেশের আপাময় জনসাধারণের জীবনের গভীরতর আকাঙ্খার প্রতিফলন। ঐতিহাসিক ছাত্র গণ আন্দোলনের নির্যাস আমাদের এই স্লোগান। অথচ আজ ৪৩ বছর পরও আমরা দেখি, শাসকশ্রেণী একের পর এক গণ বিরোধী শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিয়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে অশিক্ষিত, কূপমন্ডুক করে রেখেছে। কায়েম করেছে ধনী-গরীবের বৈষম্যের শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সমস্ত ক্ষেত্রে শিক্ষার বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরাণ্বিত করে স্বাধীনতার স্বপ্ন-সাধ-আকাঙ্খার সাথে প্রতারণা করেছে। শিক্ষার এই পরিস্থিতির পাশাপাশি শাসকদের উৎপীড়ণে আজ দেশের মানুষের প্রতিটি দিন কাটে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে শাসক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট তাদের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী চেহারা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছে। দেশের সমস্ত অংশের মানুষ এই দমন পীড়নের রাজনীতির বলি হচ্ছে। বিরোধী মতকে হত্যা-খুন-গুমের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কথা বলে তাদের সমস্ত অপকর্মকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে। তাই আজকের দিনে ছাত্রসমাজের লড়াই কেবল শিক্ষার অধিকার রক্ষার জন্যই নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের উপর রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধেও।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাদ সমাজ-সভ্যতার শত্রু। দেশের সামগ্রিক সংকটও এই কারণে সৃষ্টি হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের ভাবাদর্শকে ভিত্তি করে লড়াই গড়ে তোলা ছাড়া দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে না। এ জন্য ছাত্র রাজনীতিতেও চাই আদর্শবাদী শক্তির উল্লফন।’