Saturday, December 21, 2024
Homeফিচারফিলিস্তিন দেখিয়ে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতরটাও

ফিলিস্তিন দেখিয়ে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতরটাও

শুরুটা হলো ১১ এপ্রিল সকালে। শুরুর আগেও একটা শুরু ছিল। অনেকদিন ধরেই ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছিল বিভিন্ন জায়গায়। ১১ এপ্রিল সকালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ করছিলেন। এদের ঠেকাতে বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনুশে শফিক। পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে প্রায় একশত আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে। আর তার পরেই আন্দোলনটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, কারণ ক্যাম্পাসে পুলিশের প্রবেশ, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হউক আর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হউক- প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া না ঘটিয়ে পারে না।

এরপর একটার পর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হতে থাকে প্রতিবাদ শিবির। তালিকায় যুক্ত হয় ইয়েল, হার্ভার্ড, বার্কলে, বোস্টন, মিনেসোটা প্রভৃতি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য আন্দোলনকারী গ্রেফতার হন। ১৯৬৮ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমেরিকার ক্যাম্পাসগুলো সর্বশেষ এমন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।

শিক্ষার্থীদের দাবি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছে নয়, তাদের একটি সুনির্দিষ্ট দাবি আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার জন্য মূলতঃ অনুদান পায় নানা সংস্থা, বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ী ও ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে দাতা সংস্থা ও ব্যক্তিদের কিছু ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে। শিক্ষাক্ষেত্রে দান করা অর্থের উপর আয়কর ছাড় পাওয়া যায়। আবার গবেষণা থেকে তারা সরাসরিও লাভবান হয়। এই টাকা বাজারে খাটিয়ে তার মুনাফা ও সুদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলে। এটার পরিমাণ কম নয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুনাফার পরিমাণ বছরে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যের খুঁটিনাটি প্রকাশ করে না। কিন্তু যতখানি পাওয়া গেছে তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেনেছেন যে, ইসরায়েলকে সহযোগিতাকারী বিভিন্ন সংস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিনিয়োগ আছে। অর্থাৎ শুধু আমেরিকান সরকারই এই গণহত্যায় ইসরায়েলের সহযোগী নয়, আর্থিক বিনিয়োগের সূত্রে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এর সহযোগী। শিক্ষার্থীরা বিনিয়োগের সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছে ও ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই এ দাবি মানা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে তারা কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। রিপাবলিক কিংবা ডেমোক্র্যাট- কেউই শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলছে না। তাদের সবার সুর এক। তারা একে এন্টিসেমিটিক বা ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যায়িত করছে। বহিরাগতদের দিয়ে আন্দোলন হচ্ছে ইত্যাদি প্রচার দিচ্ছে। এইসকল প্রচারেও আন্দোলন থামছে না। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় সামিল হচ্ছে আন্দোলনে, নির্মম পুলিশি হামলার পরেও শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছাড়ছে না।

এই আন্দোলন গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে তার স্পর্ধায়, ঐক্যবদ্ধতায়। আর একইসাথে উন্মোচিত করেছে জ্ঞানের শিখরে বিচরণ করা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতরের ছবি।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments