Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদ১৪ ফেব্রুয়ারির চেতনায় শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বিরোধী লড়াইকে বেগবান করুন

১৪ ফেব্রুয়ারির চেতনায় শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বিরোধী লড়াইকে বেগবান করুন

 14 Feb Central SSFসমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু-র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মলয় সরকার, দপ্তর সম্পাদক শরিফুল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুদ রানা প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এক সামরিক অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর জনগণের উপর যথেচ্ছ নির্যাতন চালিয়ে এক পর্যায়ে তিনি জনগণের অভ্যূত্থানের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সূচনা ঘটেছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। ১৯৮৩ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক ছাত্রআন্দোলন এদেশের সংগ্রামী জনতার মাঝে জ্বালিয়ে দিয়েছিল শোষণবিরোধী চেতনা, এগিয়ে দিয়েছিল স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণের সংগ্রামকে।
বক্তরা বলেন, প্রতিটি সরকারের মতো জেনারেল এরশাদও একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে যেটি মজিদ খানের শিক্ষানীতি নামে পরিচিত। এই শিক্ষানীতির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শিক্ষা এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের সুপারিশ করা হয়েছিল। এমন এক সময়ে এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয় যখন সামরিক আইনের সমালোচনা করলেই ৭ বছরের কারাদ- হতো আর প্রকাশ্য রাজনীতি ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে সেদিন এদেশের ছাত্রসমাজ বৈষম্যের এই শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা ছাত্রসমাজ ঘোষণা করে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সংগঠিত মিছিলে সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে, অবর্ণনীয় অত্যাচার নির্যাতন চালায়। শহীদী মৃত্যুবরণ করেন জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দীপালি সাহা, আইয়ুব, ফারুকসহ অসংখ্য ছাত্র নেতাকর্মী। সরকারি হিসেবেই ১৩৩১ জনকে গ্রেফতারের কথা বলা হয়। বাস্তব চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। কিন্তু কোনো দমন-পীড়নই যে শেষ পর্যন্ত ন্যায্য আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারে না তার আরেকটি নজির ছিল এই মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলন। জাফর জয়নালের রক্তের শপথে প্রদীপ্ত ছাত্র আন্দোলনে ভীত হয়ে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সামরিক শাসক।

চট্টগ্রামে ছাত্র ফ্রন্টের মিছিল
চট্টগ্রামে ছাত্র ফ্রন্টের মিছিল

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ১৯৯০ সালে সামরিক শাসকের পতন ঘটলেও গণতন্ত্রের সমাজ এখনও আসেনি। ভোটের মাধ্যমে গত ২৪ বছর ধরে যারা এদেশ শাসন করছে তারা প্রত্যেকে গণতন্ত্রের লেবাসে অগণতান্ত্রিক শাসক। সর্বশেষ একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের সূচনা করেছে। গত ২৪ বছরে যে শিক্ষানীতিগুলো প্রণীত হয়েছে তাতেও এরশাদের মজিদ খানের শিক্ষানীতিরই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও সমানভাবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সাম্প্রাদায়িক শিক্ষার বিস্তারে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানো হয়েছে। আজও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশী দমন-পীড়ন চলে। ছাত্রলীগের হাতে খুন হয় বিশ্বজিৎ, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় আন্দোলনতম ছাত্রদেও উপর, আর ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের হাতে খুন সাবেকুন নাহার সনির মতো নিরাপরাধ তাজা প্রাণ। আজও জেনারেল এরশাদ বড় দুই দলের কাছে ক্ষমতায় যাবার অন্যতম গুটি।
বক্তরা আরও বলেন, মধ্য ফেব্রুয়ারি এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে আমদানি করা হয়েছে তথাকথিত ‘ভালোবাসা দিবসে’র মতো আয়োজন। এর মাধ্যমে শাসকরা তারুণ্যের লড়াইয়ের তেজকে যেমন স্তিমিত করে দিতে চায় অন্যদিকে ¯েœহ-মায়া-মমতা-প্রেমকে নিয়েও করতে চায় ব্যবসা। প্রকৃত ভালোবাসা কখনও স্বার্থমগ্ন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে না বরং সামাজিক দায়িত্বে উদ্বুদ্ধ করে – এই চেতনাকেও তারা ভুলিয়ে দিতে চায়। নেতৃবৃন্দ ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রকৃত চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বর্তমানের শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বার্তা প্রেরক: শরিফুল চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments