Wednesday, January 22, 2025
Homeফিচারসংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা কেন চাই

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা কেন চাই

বাংলাদেশের ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড চালিয়েও ছাত্র-জনতার শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। গত ১৫ বছর ধরে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে রাষ্ট্র শক্তির জোরে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নের এমন এক বয়ান তৈরি করেছিল- যারাই সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াতে চেয়েছে তাদেরই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তকমা এঁটে দিয়েছে। ক্ষমতার নিরঙ্কুশ চর্চার মধ্য দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক থেকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে। প্রত্যেক স্তরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই এসমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন বা সংস্কারের আকাক্সক্ষা জন্ম দিয়েছে গণমনে।

ইতোমধ্যে অন্তবর্তী সরকার কর্তৃক ১০টি সংস্কার কমিশনও গঠিত হয়েছে। যার মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও অন্যতম। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের বহুদিকের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে বর্তমান আসনভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি বদল করে সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন।

বহু বছর ধরে এদেশের বামপন্থী দলগুলো আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু খুব একটা আলোচনায় আসেনি। সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর এখন বিএনপি বাদে প্রায় সব দলই এই পদ্ধতির কথা বলছে। বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন হওয়ায় এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনাই আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। আমাদের দেশে বর্তমানে ওয়েস্টমিনিস্টার মডেলে আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ বা ‘এফপিটিপি’। এপদ্ধতিতে যে প্রার্থী বেশি ভোট পায় সেই জেতে। পরাজিত প্রার্থী বা প্রার্থীরা যে সংখ্যক ভোট বা সমর্থন পায় তার কোন মূল্য থাকে না। এ জন্য এ পদ্ধতিকে ‘উইনার টেকস অল’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন আসনের মোট ভোটের ক্ষেত্রে কোন প্রার্থী বা দল যদি ৩০/৪০ শতাংশ ভোট পায় আর অন্য প্রার্থীরা বা দলগুলো সবাই মিলে ৬০/৭০ শতাংশ ভোট পায় তাহলেও মোট ভোটের সংখ্যালঘিষ্ঠ ৩০/৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও একজন জয়ী হচ্ছে, অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তাকে সমর্থন করছে না। এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সমর্থন ছাড়াই একজন প্রার্থী বা দল এ পদ্ধতিতে জয়ী হচ্ছে এবং সরকার গঠন করছে। ফলে গণতন্ত্রকে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন বলা হলেও আসনভিত্তিক নির্বাচনে শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন নিশ্চিত হচ্ছে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিগত দিনে আপাত অর্থে যে সুষ্ঠু নির্বাচনগুলো হয়েছে সেই পরিসংখ্যানগুলো পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪১.৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ২০০টি আসনে জয়লাভ করেছিল, প্রায় সমানসংখ্যক, ৪০.০২ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল মাত্র ৬২টি আসন। অথচ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হলে বিএনপি পেত ১২৩টি আসন আর আওয়ামী লীগ পেত ১২০টি আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেলেও মোট ভোট পেয়েছিল ৪৮.০৪ শতাংশ এবং বিএনপি মাত্র ৩০টি আসনে জয়লাভ করলেও মোট ভোট পেয়েছিল ৩০.২০ শতাংশ। যদি সেই নির্বাচনটি সংখ্যানুপাতিক ভোটের নির্বাচন হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ পেত ১৪৭টি আসন এবং বিএনপি পেত ৯০টি আসন। অর্থাৎ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের কাউকে সাথে নিয়ে কোয়ালিশনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হতো।

ফলে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান পদ্ধতিতে, জনসমর্থনের ব্যবধান খুব বেশি না হলেও, পদ্ধতিগত কারণে আসন সংখ্যায় বিশাল ব্যবধান হয়ে যায়। আর এ কারণেই নির্বাচিত বা ক্ষমতাসীন দল যা খুশি তাই করতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হতো তাহলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে সরকার গঠন করতে পারলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য যে সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের সমর্থন লাগে- সাধারণ বিবেচনায় তা পেতো না। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানও বাতিল করতে পারতো না। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে হস্তক্ষেপও সম্ভব হত না। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকটের পুনর্জন্ম রোধ করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিকল্প নেই।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ‘প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ বা ‘পিআর’ নামে পরিচিত। সহজ ভাষায় এ পদ্ধতিতে নির্বাচনে মোট ভোটারের যত ভাগ ভোট যে দল পাবে, সেই দল সংসদে, সেই অনুপাতে ততগুলো আসন পাবে। আনুপাতিক নির্বাচনের তিনটি মডেল বর্তমানে প্রচলিত। যথা-
১. বদ্ধ তালিকা ২. মুক্ত তালিকা ৩. মিশ্র পদ্ধতি।

যুক্তরাজ্যের ‘ইলেকটোরাল রিফর্ম সোসাইটি’-এর দেওয়া তথ্যমতে, ১০০ এর অধিক দেশ (ইউরোপের যেমন অধিকাংশ দেশই) তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো না কোনো আনুপাতিক আসনবিন্যাস ব্যবস্থা ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার হয় পঞ্চাশটির কম দেশে। এগুলো মূলত ব্রিটিশ সিস্টেম থেকে অনুপ্রাণিত ব্যবস্থা; যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি।

সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো দলীয় তালিকাভিত্তিক আনুপাতিক ব্যবস্থা। এই পদ্ধতি নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়ার মতো ৭৭টি দেশে ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে দল বা দলীয় প্রার্থীকে দেওয়া ভোট দলের ভোট হিসেবে গণ্য হয়। সব আসনের ভোট গণনা শেষে দলগুলোকে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন বণ্টন করা হয়। সংসদে আসন পেতে হলে কোনো দলকে ন্যূনতম কিছু শতাংশ ভোট পেতে হয়। আসনগুলোতে দলের পূর্বনির্ধারিত ক্রমতালিকা অথবা নিজ নিজ আসনে দলের প্রার্থীদের পাওয়া ভোটের শতাংশের ক্রমানুসারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

তবে এতে সব সময় সংসদীয় আসনের সঙ্গে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের যোগসূত্র থাকে না। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই দুই সমস্যার সমাধানের জন্য আসনভিত্তিক ও দলভিত্তিক ভোটের সমন্বয় ব্যবহার করা হয় জার্মানি, ইতালি, জাপান, সাউথ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, মেক্সিকোর মতো প্রায় ৩০টি দেশে। এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক ভোটার নির্বাচনে দুটি ভোট দেন। একটি ভোট আসনের প্রার্থীর জন্য এবং আরেকটি ভোট দলের জন্য। কেউ চাইলে তাঁর দলীয় ভোট পছন্দের দলকে দিয়ে আসনের ভোট অন্য কাউকে দিতে পারেন। প্রতিটি আসনে প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান, তিনি নির্বাচিত হন।

সাধারণত সংসদের অন্তত অর্ধেক বা তার বেশি আসন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। বাকি আসনগুলোতে দলের পূর্বনির্ধারিত তালিকা থেকে বা যেসব প্রার্থী তাঁদের আসনে জিততে পারেননি কিন্তু অনেক ভোট পেয়েছেন তাঁদের দেওয়া হয়। কোন দল কত শতাংশ দলীয় আসন পাবে, তা একেক দেশে একেকভাবে নির্ধারিত হয়। কিছু দেশে কেবল দলীয় ভোটের শতাংশ অনুসারে আসন দেওয়া হয়। আবার কিছু দেশে এমনভাবে আসনবিন্যাস করা হয় যেন পূর্ণ সংসদে প্রতিটি দলের সরাসরি নির্বাচিত ও দলীয় ভোট থেকে প্রাপ্ত মোট আসন দলের পাওয়া মোট ভোটের যথাসম্ভব সমানুপাতিক হয়।

আনুপাতিক নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করে কোন নির্দিষ্ট দেশের পরিস্থিতি সাপেক্ষে এর প্রক্রিয়ার সুনির্দিষ্টকরণের উপর। সাধারণত এ পদ্ধতিতে কোন দলের পক্ষে ৫১ শতাংশ সমর্থন বা এককভাবে সরকার গঠন কঠিন। ফলে কোয়ালিশন বা জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিষয়টি বাংলাদেশের অতীত নির্বাচনগুলোতে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হার দেখলেও বোঝা যায়। যেহেতু কোন দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে তাই স্বৈরাচারী হয়ে উঠার সম্ভাবনা কম থাকে। সরকারে শরিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হয়। না হলে সমর্থন উঠিয়ে নিলে সরকার টিকবে না। এভাবে একটা গণতান্ত্রিক চর্চা, সহনশীলতার মনোভাব গড়ে উঠার পরিবেশ তৈরি হয়।

আসনভিত্তিক নির্বাচনে লড়াইটা অনেকক্ষেত্রে দু’জন প্রার্থীর বা দলের মধ্যে সীমিত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কোন আসনে ভোটারের পছন্দের প্রার্থী থাকলেও তারা জিততে পারবে না মনে করে, ভোট নষ্ট হবে মনে করে, অধিকতর অপছন্দের দলকে ঠেকাতে দু’জন প্রার্থী বা দলের একটি বেছে নেয়। এভাবে একটা দ্বিদলীয় বৃত্ত গড়ে উঠে। এদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যেমন দীর্ঘদিন ধরে দ্বিদলীয় বৃত্ত তৈরি করে রেখেছে। জনগণ এর বাইরে যেতে পারছে না। বিকল্প শক্তির উত্থানও এ পদ্ধতিতে সম্ভব হয় না। ছোট দলগুলো যতটুকু জনসমর্থন পায় তাতে কোন আসনে জিততে পারে না বলে সংসদে যেতে পারে না। আনুপাতিক নির্বাচনে এরকম হওয়া কঠিন। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি ভোটই হিসেবে আসে। ফলে সংসদে বহুদলীয় প্রতিনিধিতে¦র সম্ভাবনা বাড়ে, গণতন্ত্র বা সংসদ সত্যিকার অর্থে বহুদলীয় হয়ে উঠার সুযোগ তৈরি হয়।

আমরা জানি, আমাদের দেশে নির্বাচনের সময় এমপি প্রার্থীরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে। নির্বাচন হয়ে উঠে টাকা ও পেশি শক্তির খেলা। এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় না। নির্বাচন কমিশনও শক্তিশালী না হওয়ায় দলীয় ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। ফলে একেকটি সংসদীয় এলাকা হয়ে উঠে একেকজন সাংসদের মাস্তানি ও গুন্ডামির অভয়ারণ্য। এলাকার উন্নয়ন কাজের ভাগ বাটোয়ারা নিয়েই এমপিরা ব্যস্ত থাকেন। সংসদে আইন প্রণয়নে তাদের ভূমিকা থাকে যৎসামান্যই। সেক্ষেত্রে আনুপাতিক নির্বাচনে দলভিত্তিক ভোট হওয়ায় দলগুলোর কর্মসূচী, নীতি, আদর্শ সামনে আসার সুযোগ তৈরি হয়, এগুলোই আলোচনার প্রধান বিষয় থাকে। আর এলাকাভিত্তিক না হওয়ায় এতে স্থানীয় মাস্তান ও গুন্ডাবাহিনী দৌরাত্ম্য তুলনামূলকভাবে কমার সম্ভাবনা থাকে।

তবে অনেকে মনে করেন, এলাকাভিত্তিক প্রার্থী না থাকলে সাংসদদের জনগণের সাথে সম্পর্ক বা জবাবদিহিতার ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এলাকার অনেক সমস্যা যেহেতু এমপিরাই সমাধান করেন সেক্ষেত্রেও শূন্যতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই অভিযোগের সারবত্তা খুব কম। এদেশের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব, অভিযোগ নিরসনে আদৌ বুর্জোয়া দলগুলোর নেতাদের ভূমিকা আছে? জনগণের সাথে সম্পর্ক আছে? উন্নয়ন কাজ দেখার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের। কিন্তু স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়নি। যতটুকু কাঠামো ছিল, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এটাকেও ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে গেছে। ফলে আইন প্রণেতাদের ভূমিকা হবে সংসদে। আর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এলাকার জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের সাথে আনুপাতিক নির্বাচনের সাফল্য সম্পর্কযুক্ত।

আনুপাতিক নির্বাচন হলে পরাজিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হবেÑ এই অভিযোগ তুলেও অনেকে এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। এই যুক্তি যারা করছেন তারা জনগণের মতামতের উপর আস্থা স্থাপন করতে পারছেন না। ভুলে যাচ্ছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে এদেশের ছাত্র-জনতাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করেছেন। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে, অনেক প্রাণের বিনিময়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও ভিত্তি রচনা করেছেন। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই নির্ধারণ করবে তারা কাকে ক্ষমতায় বসাবে।

তাই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটার সম্ভাবনা বেশি। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মূল কথা- সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রতিফলন ঘটার সম্ভাবনা বেশি। এতে নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার কমবে, সাংসদদের এলাকাভিত্তিক আধিপত্য কমবে, জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য জনগণের কাছে দলগুলোর জবাবদিহিতা বাড়বে, সংসদে কোন বিল পাশ করতে হলে অন্যান্য দলগুলোর মতামত ও অংশগ্রহণ গুরুত্ব পাবে, রাজনীতিতে দলগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়বে। সর্বোপরি কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সুযোগ কম থাকায় স্বৈরাচারী হয়ে উঠার সম্ভাবনা কমবে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রীভূত আকাক্সক্ষা ছিল ক্ষমতায় আসীন কোন দল যেন ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। তাই জনগণের এ আকাক্সক্ষা পূরণে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রবর্তন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন।

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও

Recent Comments