বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ৮ মার্চ ২০১৪ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলন চত্বরে দিনব্যাপি আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বিকেল ৩:৩০ মিনিটে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি শুরু হয়ে পল্টন ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয় এবং সেখান থেকে র্যালি পুনরায় হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি মিলন চত্বর পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। এরপর মিলন চত্বরে বিকেল ৪:৩০ মিনিটে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা নগর শাখার সভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবি, সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ফখরুদ্দিন কবির আতিক, নারীমুক্তি কেন্দ্র-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত, সাধারণ সম্পাদক মজির্না খাতুন, ঢাকা নগর শাখার সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা এবং দপ্তর সম্পাদক ইভা মজুমদার। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা নাজনীন সুরভী।
সমাবেশ ও আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ ১০৪তম আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা উপযুক্ত বেতন, কাজের উন্নত পরিবেশ এবং ১০ ঘণ্টা কর্মদিবস এবং অভিবাসি ও কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। নারী আন্দোলনের চেতনাকে ধরে রাখার জন্য ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন ঐতিহাসিক ৮ মার্চকে নারী দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করেন। মহামতি লেনিন এর উদ্যোগে দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিকের অপরাপর সদস্যবৃন্দ সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। ফলে সবসম্মতভাবে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গৃহিত হয়। দেশে দেশে এখন নারী দিবস পালিত হলেও নারী শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি বরং শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে শতগুণ। বক্তারা বলেন, দেশে ৮০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী গার্মেন্টস শ্রমিক যার সিংহভাগ নারী শ্রমিক নূন্যতম মজুরি, কর্মপরিবেশ, মাতৃত্বকালান ছুটির দাবিতে আজও আন্দোলন চলে যাচ্ছে। কারখানায়, পরিবারে, সমাজে কোথাও নারী নিরাপদ নয়, রাষ্ট্র নিরাপত্তা এবং শ্রমের যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছে না। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে অত্যাচার নির্যাতন, ফতোয়াবাজি, ইভটিজিং কারণে কিশোরীর আত্মহত্যা, নারী ও শিশু পাচার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রায় ১১ লক্ষ নারী ও শিশু গৃহপরিচারিকার কাজ করছে। রাষ্ট্র তাদের এখনোও শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ৮ মার্চের চেতনা ছিল সকল ধরনের শোষণ হতে নারীর মুক্তি। সেই মুক্তির পথ হল শোষণহীন সমাজব্যাবস্থা। সেই ব্যাবস্থা কায়েমের জন্যে ইউরোপের রাজপথে নারীরা হাজারে হাজারে মিছিল করেছিল, অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করেছিল। আজও শোষণ বিদ্যামান। তাই এই শোষণের বিরুদ্ধে নারীসমাজকে ঐকবদ্ধ হওয়ার এবং সেই লক্ষ্যে নারী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তাঁরা।