বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ২৪ এপ্রিলকে শ্রমিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার আহ্বান জানিয়েছে।
শ্রমিকের জীবন ও কাজের নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি ও ট্রেডইউনিয়নের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সাভারের রানা প্লাজা পদযাত্রা করবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে পদযাত্রায় অংশ নেবার জন্য সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পদযাত্রার কর্মসূচী নিম্নরুপঃ
- ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় গাজীপুর চৌরাস্তায় সমাবেশ ও পদযাত্রা শুরু
- ১০টায় কোনাবাড়ীতে পথসভা
- ১১টায় কাশিমপুরে পথসভা
- ১২টায় জামগড়ায় পথসভা
- ১টায় বাইপাইলে পথসভা
- ৩টায় নবীনগরে পথসভা
- ২৪ এপ্রিল বিকাল ৫টায় রানা প্লাজায় সমাবেশ
২৪ এপ্রিল শ্রমিক গণহত্যা দিবস পালন করার আহ্বান জানিয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রচারপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, গরিব শ্রমজীবী মানুষের জীবনের ওপর এক বর্বর শোষণ-নিপীড়ন চেপে বসে আছে। কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পায় না, সেচের জন্য বিদ্যুৎ পায় না, পানি পায় না। নারীদের জীবনে মর্যাদা নেই, অধিকার নেই; ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। গরিব মানুষের জন্য চিকিৎসা নেই। গরিবের সন্তানদের জন্য লেখাপড়ার সুযোগ নেই। ছাত্রদের লেখাপড়ার খরচও দিন দিন বাড়ছে, শিক্ষাজীবন শেষে সরকার কাজের ব্যবস্থা করে না। বেকারত্বের যন্ত্রণায় ধুঁকছে হাজার লক্ষ যুবক। জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই বাড়ে, কমে না। মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী এই রাষ্ট্রে সবচেয়ে নির্মম শোষণ-নিপীড়নের শিকার হয় শ্রমিকরা।
বাংলাদেশের শ্রমিকদের আগুনে পুড়ে মরা, ভবন ধসে মরা, না খেয়ে মরা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। গতবছর ২৪ এপ্রিল ’১৩-তে সাভারে রানা প্লাজায় ভবন ধসে সরকারি হিসাবে ১১৩২ জন (বাস্তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি) শ্রমিক গণহত্যার শিকার হয়েছে। এর পূর্বেও তাজরিন ফ্যাশন্স-স্পেকট্রামসহ বিভিন্ন কারখানায় আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে শ্রমিক মরেছে। হাজারো গার্মেন্ট কারখানা বিল্ডিং কোড না-মেনে তৈরি হওয়া ভবনে চলছে। অথচ সরকারের কল-কারখানা পরিদর্শক দপ্তর আছে। ভবনের কত ওজন ধারণ করার ক্ষমতা আছে, কম্পন সহ্য করার ক্ষমতা কত – মালিক বা সরকার কেউ তা জানে না। অগ্নি নির্বাপনের জন্য আধুনিক কোনো হোস পাইপ নেটওয়ার্ক নেই। অগ্নি নির্বাপনের গাড়ি কারখানার চারপাশে ঢুকতে পারার মতো সুপরিশর রাস্তা নেই। শ্রমিকদের বেরিয়ে আসার জন্য সুপরিসর সিড়ি বা বিকল্প সিড়ি নেই, অগ্নি নির্বাপনের মহড়া হয় না। পানি কিংবা বালি দেওয়ার স্ট্যান্ডবাই বালতিও থাকে না। শ্রমিকের চোখের জন্য সেপটিক গ্লাস দেওয়া হয় না। শব্দদূষণ থেকে রক্ষার জন্য কানের ফোম দেওয়া হয় না। মাথা সুরক্ষার হেলমেট কিংবা উপরে কাজ করার নির্মাণ শ্রমিকদের সেফটি বেল্ট দেওয়া হয় না। কাঁচামাল নাড়াচাড়া করা শ্রমিকদের মেটিরিয়াল সেফটি ডাটাশিট দেওয়া হয় না, এ সম্পর্কে কোনো ধারণাও দেওয়া হয় না। অথচ তারা এডিস ডাই, ব্রাইটনার এগুলো অবলিলায় নাড়াচাড়া করছে। নিয়োগপত্র না দেওয়াতে মালিকরা ভবন ধসের পর বলতেও পারে না তার কারখানায় আজ কত লোক কাজ করছে। কতজন শ্রমিক কাজে নিয়োজিত ছিল তা মালিক-সরকার-প্রশাসন কেউ জানে না। তাই নিয়োগপত্রও জরুরি নিরাপত্তা ইস্যু।
গার্মেন্ট কম্পাউন্ডে শ্রমিকদের থাকার ব্যারাক বা কলোনি নেই বলে প্রায়শই ওভারটাইম রাত ১১টা পর্যন্ত করে কারখানা থেকে ফেরার পথে নারী শ্রমিকরা বিপন্ন হয়, পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। কারখানায় ব্যারাক বা কলোনি থাকলে তারা নিরাপদ থাকতে পারবেন অথবা কারখানার যানবাহন তাদের বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা থাকলেও কিছুটা নিস্তার পাবে। কারখানাতে বেদ্যুতিক শর্টসার্কিট হওয়া নিত্যদিনের ঘটনা। মানসম্মত বিল্ডিং এবং কনসিল ওয়ারিং না থাকায় এসব হচ্ছে। অথচ এসব বিষয় নিয়ে সরকার এবং মালিক পক্ষ নির্বিকার।
রানা প্লাজায় হত্যাকাণ্ডের শিকার শ্রমিকদের জন্য আমরা শ্রমিকদের জন্য এক জীবনের শ্রমের মূল্যের সমপরিমাণ ৪৮ লক্ষ টাকা মজুরি ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি করেছিলাম। সরকার কিংবা মালিকপক্ষ কেউই যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়নি। শ্রমিকদের জন্য প্রায় কোনো কারখানাই গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা রাখে না। সর্বাধিক দুর্দশার শিকার অসংগঠিত বা ইনফরমাল সেক্টরের শ্রমিকরা। গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবি আজো অপূরিত।
শ্রমিকদের নিরাপদ জীবন ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত, ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন-সহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে শ্রমিক ভাইদেরই সক্রিয় সংগ্রাম করতে হবে। শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান মালিক বা সরকার স্ব-উদ্যোগী হয়ে করে দেবে না, এটা প্রমাণিত। শ্রমিক বন্ধুদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, আপনারা সংগঠিত হোন, রাস্তায় নেমে আসুন – এর বিকল্প নেই।
আগামী ২৪ এপ্রিল গাজীপুর-রানা প্লাজা পদযাত্রায় সকল শ্রমিকদের শামিল হওয়ার জন্য প্রচারপত্রে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।