দুপুর থেকেই মুসলিম হল প্রাঙ্গণ মুখরিত ছিল শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিতে। কারো হাতে মানুষের মুখ, কারো মুখে দানবের মুখোশ। কেউ সেজেছে দৈত্য, কেউ পরেছে পেঁচা, আবার কেউ পরেছে বিভিন্ন পাখির মুখোশ। আর যারা কিছু পরেনি তাদের হাতেও শোভা পাচ্ছিল নানা রঙ-বেরঙের ফেস্টুন। সবার আনন্দ উচ্ছল মুখগুলো পুরো মুসলিম হল প্রাঙ্গনকে যেন করেছে আলোকিত। আর আলোকিত করারই কথা কারণ এ যে নতুন বছরকে বরণের উৎসব, পুরানো গ্লানি-জরা ভুলে যাওয়ার দিন।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সোমবার ১৪ এপ্রিল ২০১৪ নগরীর মুসলিম হলে “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা” এ শ্লোগানে শিশু কিশোর মেলা ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে বসেছিল বিভিন্ন স্কুলের কচি-কাঁচাদের মেলা।
তাদের পরিবেশিত গান-নাটক-নাচের আয়োজন উপভোগ করতে উপস্থিত ছিল হলভর্তি মানুষ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ডা. সুশান্ত বড়ুয়া এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন অধ্যাপক আবুল মনসুর। বক্তব্য রাখেন শিশু-কিশোর মেলা সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস ও চারণ এর ইন-চার্জ ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সোমা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কচি-কাঁচাদের সুসজ্জিত র্যালি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
আবুল মনসুর তাঁর বক্তব্যে বলেন, বর্ষবরণ এখন বাঙালির সবচেয়ে বড় অসম্প্রদায়িক উৎসবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সাথে এ কথাও মনে রাখতে হবে যারা এ উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ছিল- বিশেষ করে গ্রাম বাঙলার কৃষক, তাদের আজ দুর্দিন। কারণ ফসলের উৎসবেও আজ তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। তাই এ সময়ে অন্ত্যজ শ্রেণীর কথাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের সুস্থ-সংস্কৃতির বিকাশে উন্নত নৈতিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংগঠন ও অভিভাবকদের ভূমিকা আরো বাড়াতে হবে যাতে বিদেশী ও ভোগবাদী অপসংস্কৃতি শিশু-কিশোরদের সহজ মননকে নষ্ট করতে না পারে।
এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” এ আহ্বানে সম্মিলিত গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন।
এর পর শিশু কিশোর মেলা ও চারণের শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করে লোকায়ত চির পরিচিত গানগুলো –কলকল ছলছল নদী করে টলমল, নোঙর ছাড়িয়া নাঙয়ের, নতুন ধানের চিরা দিব, নতুন ধানের খৈ, দরজ্জার কুলত বসত গরি, সেদিন আর কত দূরে।
অনুষ্ঠানে ‘ও রমাছে লালে লালে’, মারমাদের বিজু উৎসবের এ গানটি সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
শিশু-কিশোরদের নাটক “শূল রাজার দেশে” মঞ্চায়নের মাধ্যমে এ আয়োজন শেষ হয়।