Saturday, November 23, 2024
Homeসাম্যবাদঅশ্লীলতা-মাদক-জুয়া ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনের ডাক

অশ্লীলতা-মাদক-জুয়া ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনের ডাক

রংপুরে উত্তরাঞ্চলীয় নারী সমাবেশ

BNMK nari somabesh--1অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা, মাদক-জুয়া, নারী নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার বন্ধ এবং মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক নিয়ে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে ২৪ আগস্ট রংপুরে অনুষ্ঠিত হল রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় নারী সমাবেশ। এ উপলক্ষে সহস্রাধিক নারীর এক বিশাল মিছিল বেলা ১২টায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে শুরু হয়ে পৌরবাজার-পায়রা চত্বর-জাহাজ কোম্পানি মোড়-প্রেসক্লাব ও গ্রান্ড হোটেল মোড় হয়ে পুনরায় পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশ বেলা ৩টায় টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারীমুক্তি কেন্দ্র গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রোকেয়া খাতুন এবং সভা পরিচালনা করেন রংপুর জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক আরশেদা খানম লিজু। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। আরো বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত, সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন, সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস পপি।
সমাবেশে প্রধান বক্তা কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, নারী সমাজের উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার যে ভয়ংকর রূপ আমরা দেখছি তা চূড়ান্তভাবে অবক্ষয়ী- বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি। এ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব নারী নিগ্রহের মাত্রাই শুধু বাড়াবে না, সমাজেও নিদারুণ সাংস্কৃতিক সংকট ডেকে আনবে। ফলে সকল প্রকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ নারীমুক্তি আন্দোলন আজ সমাজপ্রগতির সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। শোষণমুক্তির চেতনায় নারী আন্দোলন সংগঠিত করা ছাড়া সত্যিকার নারীমুক্তি অসম্ভব। নারীর বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় তথা মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রগতিশীল বিবেকবান মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, আজ থেকে ১৯ বছর আগে ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ইয়াসমিন নামক কিশোরী পুলিশ গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে দিনাজপুরে এক গণঅভ্যুত্থানমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। গণআন্দোলনের চাপে সেদিন প্রশাসন অচল হয়েছিল, ফাঁসি হয়েছিল তিন পুলিশ সদস্যের। সেই আন্দোলন ইতিহাসে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসাবে ঘোষিত হয়। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এই দিবসে অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা ও নারী নির্যাতন-নারী-শিশু পাচার বিরোধী সমাবেশ আয়োজন করেছে।

১৮ অক্টোবর বগুড়ায় নারীমুক্তির সমাবেশ
১৮ অক্টোবর বগুড়ায় নারীমুক্তির সমাবেশ

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা, মাদক-জুয়া, নারীর প্রতি সহিংসতা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে নারীসমাজ ও দেশবাসী আতংকগ্রস্ত। মোবাইল ফোনে ছবি ডাউনলোড, পর্নো পত্রিকা, নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীদের যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতে করে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। মাদক-জুয়ার আসর চলছে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে। এই অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা ও মাদক-জুয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি নিগৃহিত ও নির্যাতনের শিকার হয় নারীরা। সেজন্য বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এসবের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান করছে। শুধু রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে ১২ জন। যার মধ্যে ৮ জনই শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ৯৮ জন। যার মধ্যে ৪৯ জনই ছাত্রী। গাইবান্ধায় রিক্তা হত্যার প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। শুধু রংপুর-গাইবান্ধা নয়, নারী নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ সারা বাংলাদেশে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের অভাবে নারীর প্রতি এই সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সকল বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব। আর মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক চিন্তার ফলে সমাজের মননকাঠামোয় নারীদের সম্পর্কে যে অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি সেই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে নেতৃবৃন্দ রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
সমাবেশ থেকে ১৫-২১ অক্টোবর রংপুর রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলায় সপ্তাহব্যাপী অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা বিরোধী প্রচার, গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি এবং ২১ অক্টোবর জেলা উপজেলায় অশ্লীল পোস্টারে কালি লেপন, অপসারণ ও অগ্নিসংযোগ-এর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত

১৯৯৪ সালে দিনাজপুরে পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ২৪ আগস্ট বিকাল ৫টায় নিউমার্কেট চত্বরে এক মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি পপি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আসমা আক্তার, সহ-সাধারণ সম্পাদক পূরবী চক্রবর্তী।
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে ২৪ আগস্ট বিকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নগর শাখার সভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তাসলিমা নাজনীন সুরভী, তাসলিমা আক্তার বিউটি, ফারহিন ইসলাম সোমা।

অশ্লীল পোস্টার-পর্নোপত্রিকায় কালি লেপন ও অগ্নিসংযোগ

21.10.2014.p.jpg2অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১ অক্টোবর সকাল ১১টায় বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্তরে বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং অশ্লীল ও নোংরা পোস্টারে কালিলেপন ও অগ্নিসংযোগ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সংগঠনের জেলা নেতা কামরুন্নাহার খানম শিখার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ রংপুর জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সংগঠক নন্দিনী দাস, মৌরি প্রমুখ। সমাবেশ শেষে নারীমুক্তির সংগঠকরা প্রেসক্লাব চত্বরে পর্নোপত্রিকায় অগ্নিসংযোগ ও সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সামনে বাংলা সিনেমার অশ্লীল পোস্টারে কালি লেপন করে। গাইবান্ধায়, বগুড়ায়ও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়।
Gaibandha_Narimuktiবাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ‘অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা ও মাদকের বিস্তার এবং যুবসমাজের উপর এর ভয়াবহ প্রভাব’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা ১৭ অক্টোবর মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রংপুর জেলার সভাপতি আরশেদা খানম লিজু এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুন নাহার লিপি। বক্তব্য রাখেন ভাষা সৈনিক ও শিক্ষাবিদ মীর আনিসুল হক পেয়ারা, কারমাইকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক মলয় কিশোর ভট্টাচার্য, অধ্যক্ষ ফকরুল আনাম বেন্জু, বাসদ রংপুর জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সভাপতি এড. রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ, মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু নাগ, মাহিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভার্নিং বডির সদস্য আব্দুস সোবহান, নাট্যকার ডা. মানস সেন গুপ্ত, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মাহিগঞ্জ ইউনিটের কমান্ডার মনির হোসেন, মাহিগঞ্জ বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুল্লাহ মিয়া, ক্রীড়া সংগঠক আব্দুর রহমান বাবু, নারীমুক্তি কেন্দ্রের জেলা সংগঠক ইয়াসমিন হক, কামরুন্নাহার খানম শিখা প্রমুখ।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments