Sunday, December 22, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধঅনুশীলন : অক্টোবর ২০১৪ : সম্পাদকীয় : সূচীপত্র

অনুশীলন : অক্টোবর ২০১৪ : সম্পাদকীয় : সূচীপত্র

সম্পাদকীয়

finial cover [dropcap]স[/dropcap]ম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকার আর বেশি দিন অর্থায়ন করবে না, নিজেদেরই আর্থিক দায়িত্ব নিতে হবে’। সরকারের এই মন্ত্রী পত্রিকায় কলাম লিখে ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পারেন কিন্তু প্রতিনিয়ত সেই আন্দোলনের মর্মবস্তুর সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে চলছেন। মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসকে নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে ‘প্রগতিশীল’ বলে বাহবা কুড়ানোর এই কুৎসিত রাজনীতি আর কত? তবে শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খোদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন এর প্রমাণ।

শিক্ষা নিয়ে সরকারের এই নীতিগত অবস্থানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমাগত ফি বাড়ছে, জনগণের অর্থে নির্মিত অবকাঠামো ব্যবহার করে দেদারসে বাণিজ্যিক নাইটকোর্স খোলা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি বিভাগে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে নাইটকোর্স খোলা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বিক্রি চলছে। সম্প্রতি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার, এটি শিক্ষা বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করবে। প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষায় ক্রমাগত বেসরকারিকরণ ঘটছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে পিএসসি, জেএসসি, এইচএসসিসহ সকল পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের নৈতিক অধঃপতনের রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে। অথচ ‘গত ৫ বছরে প্রশ্নফাঁস হয়নি’ এ কথা বলে শিক্ষামন্ত্রী বরং দায়ী ব্যক্তিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রফাঁস ও  ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। শিক্ষার এই বেহাল দশা লাগামহীন বাণিজ্যিকীকরণেরই ফলাফল।

প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার সামগ্রিক সংকটগুলোকে চিহ্নিত করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ’১৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ-সংকোচননীতি বিরোধী শিক্ষা কনভেনশন। কনভেনশনের তিন মাস আগে থেকে আমরা সারাদেশে ধারাবাহিক প্রচার, ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাবিদ-অভিভাবকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে শিক্ষার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত তৈরি করার চেষ্টা করেছি। আগামী দিনে একটা কার্যকর ছাত্রআন্দোলন গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই। দিনব্যাপী কনভেনশনে ‘শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ’ এবং ‘শিক্ষার দর্শন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব’ শীর্ষক দু’টি ধারণাপত্র উপস্থাপিত হয়। সবশেষে ‘কনভেনশন ঘোষণা’য় আগামীতে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। অন্যান্য আলোচকের মধ্যে বাসদ, কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী শিক্ষার দর্শন, শিক্ষায় নানা সংকট, ফ্যাসিবাদের প্রবণতা ও বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করেন। বিষয়গুলো এই সংখ্যায় পত্রস্থ হলো।

শিক্ষাক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির সাথে সাথে জাতীয় জীবনেও সংকট ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে। অনির্বাচিত সরকার সম্প্রতি আবাসিক খাতে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য উর্দ্ধমুখী। জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা-মজুরির জন্য রাস্তায় নামলে সরকার তাদের উপরই দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে জনগণের সামনে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

এই ঘোরতর বিপদের দিনে দুঃসংবাদ এলো গত ৩ অক্টোবর ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের প্রয়াণে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপনকারী ভাষা আন্দোলনের বীরসৈনিক, ৫২’র উত্তাল দিনে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মানুষটি আর নেই। আমরা তাঁর সংগ্রামী জীবনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

দেশের এই পরিস্থিতিতে অনুশীলনের ২য় সংখ্যা প্রকাশিত হলো। প্রথম সংখ্যার মতো এবারও আপনাদের মতামত জানিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করবেন।

শুভেচ্ছা সহ

সাইফুজ্জামান সাকন, সভাপতি
স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

[divider]


 

সূচীপত্র

শিক্ষা কনভেনশনের আহ্বান : শিক্ষার উপর সর্বগ্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই হবে
সামাজিক প্রয়োজনের জন্য যদি শিক্ষা হয়, তাহলে এই প্রয়োজন ধারণ করা ছাড়া শিক্ষিত মানুষ হওয়া অসম্ভব
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যু
সংস্কৃতি, বিনোদন ও আমরা
ষাটের দশকের এক অপরাজেয় তারুণ্যের কথা
অথচ শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, শিক্ষার মান নাকি বাড়ছে…………….!
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই, চলছে লাগামহীন শিক্ষাবাণিজ্য
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রীর নতুন ঘোষণা ও আমাদের কথা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ কি থাকা উচিত?
আন্দোলন সংবাদ
শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ
শিক্ষার দর্শন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব
শিক্ষা কনভেনশনের ঘোষণা

[divider]


কমরেড কৃষ্ণ কমল লাল সালাম

K Komol-3গত ২১ অক্টোবর ২০১৪ বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি বগুড়া জেলা শাখার সমন্বয়ক কমরেড কৃষ্ণ কমল সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। দলীয় মেস থেকে   ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে চৌরাস্তার কাছে আদর্শ কলেজের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় তিনি নিহত হন। তাঁর মৃত্যুতে দলের নেতা-কর্মীরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে দলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরবর্তীতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারাকেই সঠিক আদর্শ মনে করতেন। আমৃত্যু এ আদর্শকে ধারণ করার সংগ্রামে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। এই সংগ্রামে দলের সাথে তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যকেই  যুক্ত করেছিলেন।

কমরেড কৃষ্ণ কমল জয়পুরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দলের সাথে একাত্ম হওয়ার সংগ্রামে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাঁর সংগ্রামী স্মৃতির প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments