Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা শ্রমিক গণহত্যা দিবস পালন করুন

২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা শ্রমিক গণহত্যা দিবস পালন করুন

শ্রমিকের জীবন ও কাজের নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে আসুন

1375510918গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ২৪ এপ্রিল শ্রমিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার আহ্বান জানিয়েছে। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে ১১৭৬ জনের বেশি শ্রমিক নিহত ও নিখোঁজ হয়েছিলেন। আগের দিন ফাটল ধরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ৫টি গার্মেন্টসের শ্রমিকদের জোর করে কাজ করতে বাধ্য করেছিল ভবন মালিক ও গার্মেন্টস মালিকরা। ভবনটি বন্ধ করার ব্যবস্থা নেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। এর ফলে কাজ শুরুর কিছুক্ষণ পরই শ্রমিকদের মাথার ওপর পুরো বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে। এই ঘটনা পুরো দুনিয়াকে দেখিয়ে দেয় মালিকশ্রেণীর অমানবিক চরিত্র এবং সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণে বাংলাদেশে শ্রমিকরা কতটা নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কাজ করে। এর কয়েক মাস আগে আশুলিয়ার তাজরিন গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল সরকারি হিসাবে ১১৩ জন শ্রমিক। বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছিলেন অনেকে। এর পূর্বেও স্পেকট্রাম-কেটিএসএ-হামীমসহ বিভিন্ন কারখানায় আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে শ্রমিক মরেছে। অনেক গার্মেন্ট কারখানা বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি হওয়া ভবনে চলছে। অগ্নি নির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা নেই। কারখানার মধ্যেই গুদাম। শ্রমিকদের জন্য ‘নিরাপদ কর্মপরিবেশ’ নিশ্চিত করতে যেটুকু খরচ করতে হয়, এদেশের মালিকশ্রেণী তা করতে চায় না বলেই একের পর এক ‘দুর্ঘটনায়’ শ্রমিকের মৃত্যুর মিছিল। এদেশে শ্রম সস্তা, শ্রমিকের জীবন আরো সস্তা।

Rana-Plaza-Trgedyশ্রমিক গণহত্যা দিবস উপলক্ষে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রচারপত্রে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর যথাযথ ক্ষতিপূরণও মালিকরা দিতে চায় না। গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, বামপন্থী রাজনৈতিক দল, সচেতন মহল ও বিশেষজ্ঞ-বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছিল — নিহত ও পঙ্গু শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রানা প্লাজা-তাজরীনসহ এধরণের ঘটনায় আন্দোলনের চাপে সাময়িকভাবে নির্দিষ্ট আইনের বাইরে গিয়ে ক্ষতিপূরণের নামে কিছু অনুদান দেওয়া হয়েছে, তাও ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই পুরোটা এখনো পায়নি। গার্মেন্টসের বিদেশি ক্রেতা ও সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তির অনুদান থেকে মূলত এই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে, মালিকপক্ষকে বেশি কিছু দিতে হয়নি। এর মধ্যেও, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জমা হওয়া ১২৭ কোটি টাকার তহবিল থেকে মাত্র ২২ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, বাকী টাকার হিসাব দেয়া হয়নি। এখানে ক্ষতিপূরণের দায়ভার কার কার এবং এর পরিমাণ কি হিসাবে নির্ধারিত হচ্ছে সেটি পরিষ্কার করা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী গঠিত একটি বিশেষ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ কমিটি হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণের ন্যায়সঙ্গত হার এবং দায়ভার হিসাব করে তাঁদের মতামত কোর্টে জমা দিয়েছে, কিন্তু দুবছর পরও কোর্ট থেকে কোন রায় দেয়া হয়নি। ফলে, ভবিষ্যতে কোন কারখানার শ্রমিকরা এই বিধানে, এই হারে কোন ক্ষতিপূরণ পাবে না। আবারো এরকম কোন ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণের জন্য আবার শোক ভুলে রাস্তায় নামতে হবে শ্রমিকদের। অন্যদিকে, রানা প্লাজায় হাজার শ্রমিক হত্যার দায়ে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের বিচারপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা হচ্ছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনে পক্ষ থেকে শ্রমিকদের নিরাপদ জীবন ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে শ্রমিকদের সক্রিয় সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান মালিক বা সরকার স্ব-উদ্যোগী হয়ে করে দেবে না, এটা প্রমাণিত।

২৪  এপ্রিল শুক্রবার, বিকাল ৫টায় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে মীরপুর ১১ নং পূরবী সিনেমা হলের সামনে, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড় ও গাজীপুর চৌরাস্তায় শ্রমিক সমাবেশের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে:

  • ‘রানা প্লাজা’ ভবন মালিক, গার্মেন্টস মালিক, ভবন অনুমোদনকারী কর্মকর্তাসহ দায়ীদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি দিতে হবে।
  • শ্রম আইনের বদল করে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান করতে হবে।
  • শ্রমিকের নিরাপদ কর্মস্থল ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চাত করতে হবে।
RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments