ব্যর্থ-দায়িত্বহীন পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শাস্তি চাই
সম্প্রতি বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে বিভিন্ন স্থানে নারীদের লাঞ্ছনা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ও বর্বরতম ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়।
বর্ষবরণ উৎসব শেষে মানুষ যখন ঘরে ফিরে যাচ্ছিল সে সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে ৩০/৩৫ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ চক্র, যাদের অনেকেই তরুণ, পরিকল্পিতভাবে ভুভুজেলা বাজাতে বাজাতে মেয়েদের শ্লীলতাহানি করছিল। ভুভুজেলার শব্দে নির্যাতিত মেয়েদের চিৎকারের শব্দ চাপা পড়ে গিয়েছিল, আশেপাশের মানুষ বুঝতেই পারেনি কি বর্বর ঘটনা এখানে ঘটছে। এই দিনেই জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে। বর্ষবরণ উৎসবে শুধু নয়, বাস্তবে এদেশের নারীরা ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে, মার্কেটে সবখানেই নিগৃহীত হয়, লাঞ্ছিত হয়। দিনে দিনে উৎসবগুলোতে নারী নিপীড়নের ঘটনা মহামারীর আকার ধারণ করেছে।
আমরা মনে করি, এর পেছনের প্রধান কারণ নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক অগণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি – যে দৃষ্টিভঙ্গিতে নারী পুরুষের ভোগের বস্তু ছাড়া আর কিছু নয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পুঁজিবাদের ভোগবাদী সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান প্রচার ও প্রসার। আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলোতে, পত্রপত্রিকায়, টিভি-সিনেমায়, তথাকথিত নাটক-সাহিত্যে নারী-চরিত্র এবং নারী-দেহকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তাতে শৈশবকাল থেকেই একজন কিশোর নারীকে ভোগের বস্তু হিসাবেই ভাবতে শেখে। আর এর ফলে নারীর প্রতি কোনো ধরনের শ্রদ্ধাবোধই তাদের মনে গড়ে উঠতে পারে না। এর উল্টোদিকে আছে মৌলবাদী চক্র যারা ধর্মের নামে নারীকে ঘরে বন্দি রেখে ভোগ করতে চায়। এদের মনোভাবের মধ্যেও নারীর প্রতি কোনো ধরনের শ্রদ্ধা ও মর্যাদা স্থান পায় না।
সারাদেশে অবাধে মাদক-পর্নোগ্রাফির বিস্তার ঘটছে। জাতীয় উৎসবসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগ ডে, কনসার্ট-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ এবং প্রবৃত্তিকে উসকে দেয় এমন গান-নাটক-সিনেমার প্রসার বাড়ছে। এর ফলাফলেই এসব ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। এমনকি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নারীদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালানো হয় এখানে। প্রশাসন এইসব ঘটনায় নির্বিকার ভূমিকা পালন করে আসছে, দোষীদের বিচার না করে বার বারই রক্ষার চেষ্টা করেছে এবং করছে। বিচারহীনতার ফলেই এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা বেড়েই চলেছে যা ন্যায়বিচারকামী মানুষের কাছে হতাশাজনক এবং নারীর জন্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলছে।
আশার কথা, বর্ষবরণের যৌননিপীড়নের ঘটনায় যেমন ছাত্র-নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত জড়িত, ঠিক এর বিপরীতে কিছু সাহসী তরুণ ছাত্রই এই ঘটনাকে প্রতিহত করার সৎ সাহস দেখিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্ররা ন্যাক্কারজনক এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তাই আসুন, প্রতিবাদে সোচ্চার হই। মনুষ্যত্ব-মূল্যবোধের ঝান্ডা ঊর্ধ্বে তুলে ধরি। মানুষ হিসাবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত প্রচারপত্র
২২/১ তোপখানা রোড (৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১০০০
ফোন : ৯৫৭৬৩৭৩, মোবাইল : ০১৯১২০০২৩১৯