২০ মে মহান ‘চা শ্রমিক দিবস’ এর ৯৪ তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০মে ২০১৫ বুধবার বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার উদ্যোগে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। অনুষ্ঠানসূচীর মধ্যে সকাল ৮টায় বাগানে বাগানে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদ স্মরণে কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। সিলেট অঞ্চলের মালনীছড়া, লাক্কাতুরা, হিলুয়াছড়া,দলদলি, তারাপুরসহ বিভিন্ন চা বাগানে পুস্পাঅর্ঘ্য প্রদান করা হয়। এদিকে বিকাল ৪ টায় মালনীছড়া চা বাগানে অনুষ্ঠিত হয় শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার আহবায়ক বীরেন সিং এর সভপতিত্বে এবং অজিত দাশের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সভাপতি সুশান্ত সিনহা, চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক হৃদেশ মুদি, নারী মুক্তি কেন্দ্র সিলেট জেলার সদস্য মিতা সিং, সংগঠন মালনীছড়া বাগান শাখার সভাপতি সন্তোষ নায়েক, লাক্কাতুরা শাখার সাধারণ সম্পাদক লাংকাট লোহার, চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ মালনীছড়া শাখার সভাপতি অধীর বাউরী,আমেনা বেগম, আসা সবর প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, ঐতিহাসিক ২০মে ‘চা শ্রমিক দিবস’ শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দিন। আজ থেকে প্রায় ৯৪ বছর পূর্বে বৃট্রিশ শাসন শোষন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে চা শ্রমিকরা পরিচালনা করেন ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলন। দীর্ঘ্য পথ পায়ে হেটে সিলেট থেকে চাঁদপুর স্টীমারঘাটে পৌছালে ভয়ংকর গোর্খা বাহীনি নির্বিচারে হত্যা করে শত শত চা শ্রমিকদের, এমনকি শ্রমিকদের যে লাশগুলো মেঘনা নদীতে ভাসছিল, তার পেট কেঠে দেয়া হয় যাতে পানিতে ডুবে যায়। সেদিন মালিকদের নির্মম নির্যাতনে এই আন্দোলন সফল হয় নি, কিন্তু চা শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি করেছি এক সংগ্রামী চেতনা। এই চেতনার উপর দাড়িয়েই আমাদের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে চা শ্রমিকরা রেখেছিলেন সংগ্রামী ভূমিকা। অথচ আজ স্বাধীনতার প্রায় ৪৪ বছর পর চা শ্রমিকদের জীবন সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। আজো নিশ্চিত হয়নি মান সম্মত মজুরি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার আভাবে তারা দিনাতিপাত করছেন মানবেতর জীবন। তাই ঐতিহাসিক ‘চা শ্রমিক দিবসের’ চেতনাকে ধারণ করে একদিকে যেমন দৈনিক মজুরি ৩’শ টাকা নির্ধারণ,আবিলম্বে নতুন চুক্তি সম্পাদন, এবং ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়তে হবে, অন্যদিকে সকল ধরণের শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গড়ে তুলতে হবে বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলন। বক্তারা আগামীদিনের এই লড়াই সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে হীরক রাজার দেশে চলচিত্রটি প্রদর্শিত হয়।