Saturday, November 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - মে-জুন ২০১৫কৃষি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ ॥ জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-অবরোধ

কৃষি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ ॥ জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-অবরোধ

ধান-সহ ফসলের ন্যায্যমূল্য ও উন্নয়ন বাজেটের ৪০% বরাদ্দের দাবি

SKKF (2) copy

সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এবং বাসদ (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে কৃষিখাতে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% প্রত্যক্ষ বরাদ্দ, ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু, ধান-ভূট্টাসহ ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, হাটে-বাজারে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, সকল বয়স্ক এবং অসহায় নারীদের মাসিক ৩০০০ টাকা ভাতা প্রদান, ক্ষেতমজুরদের সারাবছর কাজ, গ্রামীণ গরিব মানুষের জন্য আর্মি রেটে রেশন, ভূমিহীনদের খাসজমি প্রদান, সার-বীজ-কীটনাশক-ডিজেলের দাম কমানো, কৃষি উপকরণ বিএডিসি’র মাধ্যমে সরবরাহ, টিআর-কাবিখা-কর্মসৃজন-ভিজিএফ-ভিজিডিসহ সকল সরকারি সাহায্যের সংখ্যা-পরিমাণ-সময় বৃদ্ধি এবং অনিয়ম দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ ও সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার এবং সহজ শর্তে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ প্রদান ও এনজিও-মহাজনী সুদ আইন করে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৭ মে ঢাকায় বিক্ষোভ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ এবং ২০ মে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত কৃষক-ক্ষেতমজুর সমাবেশ শেষে কৃষি ও কৃষককে রক্ষায় মিছিল সহকারে কৃষি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সংগঠনের সভাপতি শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আলমগীর হোসেন দুলাল, আহসানুল হাবিব সাঈদ ও মনজুর আলম মিঠু।

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘পুঁজিবাদী শোষণ যত তীব্র হচ্ছে ততই এদেশের কৃষক-ক্ষেতমজুরদের জীবন-জীবিকাসহ কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, অসাধু ব্যবসায়ী-রাজনীতিক চক্রের কবলে পড়ে কৃষক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আজ সর্বস্বান্ত। একই সাথে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির কাছে তাদের নির্ভরশীল করে তোলা হয়েছে। শোষণমূলক এ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হলে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের কৃষি-কৃষক এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আজ বহুমুখী সংকটে জর্জরিত। রাষ্ট্রীয়ভাবেও যে কৃষিখাতকে যথোপযুক্ত গুরুত্ব দেয়া হয় না, প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটে। একদিকে কৃষককে চড়া দামে সার-বীজ-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ কিনতে হয়, অপরদিকে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে হতে হয় বঞ্চিত। ফলে কৃষক একবার কিনতে ঠকে, আরেকবার বেচতে ঠকে। এভাবে ক্রমাগত সে সর্বস্বান্ত হয়। এছাড়া ভূমিহীন-ক্ষেতমজুরদের অবস্থা আরো নাজুক। সারাবছর কাজের কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী, দারিদ্র্যের কষাঘাতে তারা জর্জরিত। ভূমিহীন ক্ষেতমজুরের সারাবছরের কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানও রাষ্ট্রের জরুরি দায়িত্ব। এ জন্য ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান করার দাবি দীর্ঘ দিনের।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য নেতৃবৃন্দ সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জোর দাবি জানান এবং সাথে সাথে কৃষক ও কৃষি এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার দাবিতে জনগণকে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে একটি প্রতিনিধি দল কৃষি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে।

সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

গাইবান্ধায় ধানচাষীদের সড়ক অবরোধ
গাইবান্ধায় ধানচাষীদের সড়ক অবরোধ

২০ মে ধান-গম-ভুট্টাসহ কৃষি ফষলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও সরকারি উদ্যোগে হাটে হাটে ক্রয় কেন্দ্র খুলে ধানসহ কৃষি ফসল ক্রয় করা, গ্রামীণ গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য আর্মি রেটে রেশন এবং উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দ করে কৃষকদের জন্য সরাসরি ভর্তুকি প্রদান ও সার-বীজ-কীটনাশক-ডিজেল সরবরাহ করে কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্নস্থানে ধান সড়কে ফেলে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ২০ মে সকাল ১১টায় রংপুর নগরীর সাতমাথায় চাষীদের অবরোধে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। কৃষক ফ্রন্টের জেলা সংগঠক ও বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু’র সভাপতিত্বে অবরোধ পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পলাশ কান্তি নাগ, বাবু মিয়া, নুর ইসলাম, ক্ষতিগ্রস্ত চাষী বাদশা মিয়া প্রমুখ।

রংপুর সাতমাথায় রাস্তায় ধান ঢেলে বিক্ষোভ
রংপুর সাতমাথায় রাস্তায় ধান ঢেলে বিক্ষোভ

গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে বেলা ১২টায় উপজেলার দারিয়াপুর হাটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিক্ষুদ্ধ কৃষকরা ধান ও ভুট্টা রাস্তায় ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং ধান-ভুট্টার বস্তা দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে। এখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন জেলা বাসদ (মার্কসবাদী) আহবায়ক কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদ সদস্য সচিব মনজুর আলম মিঠু, গিদারী ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক গোলাম ছাদেক লেবু।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সকাল ১১টায় স্থানীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল ফরিদগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদস্য সচিব জিএম বাদশা, মৎস্যজীবি সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা আব্দুল ওয়াদুদ, ফারুক আহম্মেদ পাটওয়ারী, জাহাঙ্গীর হোসেন ও মৎস্যজীবি নুরুল ইসলাম কুট্টি প্রমুখ।

ফরিদগঞ্জে মানববন্ধন
ফরিদগঞ্জে মানববন্ধন

বাঁশখালীতে উপজেলা সদরে মিছিল, সমাবেশ ও ইউএনও-র মাধামে ডিসিকে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে শহরের চৌরাস্তার মোড়ে শতাধিক কৃষকের অংশগ্রহণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া মিছিল সমাবেশ হয়েছে বগুড়া, দিনাজপুর, কিশোরগঞ্জের গোবিন্দপুর, বাকচান্দা ও গাঙগাটি বাজার-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এসব বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বছর প্রতি মন ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৭০০-৭৫০ টাকা। অথচ বর্তমানে কৃষকদের বাধ্য হয়ে ৪০০-৪৫০ টাকায় প্রতি মন ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার মন প্রতি ৮৮০ টাকা ধানের মূল্য নির্ধারণ করে ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও কোথাও কোনো ধান ক্রয় করেনি। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছে কৃষকরা। অন্যদিকে ক্ষেতমজুরদের বছরে ৯ মাস কোনো কাজ থাকে না। ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য এবং শিল্পের কাঁচামালের উৎস কৃষি। অথচ প্রতি বছর

বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল
বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল

জাতীয় বাজেটে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয় এই কৃষি খাত। এখানে বাজেট বরাদ্দ এতই সামান্য যা এই খাতের সঙ্গে যুক্ত বিশাল জনগোষ্ঠির সঙ্গে তামাশা করার সামিল।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকার ঘোষিত মূল্যে ধান ক্রয়, সকল বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধী ও অসহায় নারীদের নুন্যতম ৩ হাজার টাকা মাসিক ভাতা প্রদান, অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা, যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য, মাদক জুয়া হাউজি বন্ধে কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং মানব পাচার চক্রের বিচারের দাবি জানান।

ধান-গম-ভূট্টার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং মানব পাচারকারী চক্রের শাস্তির দাবিতে বাম মোর্চার বিক্ষোভ

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে ধান, গম ও ভূট্টার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে ও দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানির প্রতিবাদে এবং থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় মানব পাচার-হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে ১৬ মে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিকাল ৪.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাম মোর্চার সমন্বয়ক গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের এড. আবদুস সালাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, বাসদ(মাহবুব) নেতা মহিনউদ্দিন লিটন প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়েও কৃষকের ঘরে আজ আহাজারি চলছে। বাজারে ধান-ভুট্টার দাম এতই কম যে, লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচের চাইতে মনপ্রতি ২০০ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকারের মূল্য নির্ধারণ ও ধান ক্রয়ের ঘোষণা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। একদিকে কৃষককে চড়া দামে সার-বীজ-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ কিনতে হয়, অপরদিকে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে হতে হয় বঞ্চিত। এভাবে ক্রমাগত সে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশে পাঠানোর নামে থাইল্যান্ডে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের সাথে জড়িত মানব পাচারকারী রাজনৈতিক-ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী চক্রের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্পূর্ণভাবে সরকারকেই এর দায়-দয়িত্ব নিতে হবে। নেতৃবৃন্দ সাগরে ভাসমান বিপন্ন বাংলাদেশীদের আশ্রয় দিতে থাইল্যা–মালেশিয়া-ইন্দোনেশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সাম্যবাদ মে-জুন ২০১৫

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments