সভা-সমাবেশ-মিছিলে বাধা প্রদান ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মহাজোট সরকার ক্রমশ তার স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী মুখোশ খুলে ফেলেছে
সোমবার ৮ জুন ২০১৫ রাজধানীর তোপখানা রোডের নির্মল সেন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা-সহ অন্যান্য প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সভা-সমাবেশ-মিছিলে বাধা প্রদান ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মহাজোট সরকার ক্রমশ তার স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী মুখোশ খুলে ফেলেছে। উন্নয়নের ধুয়ো তুলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে একদিকে সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি ও অন্যদিকে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী ও সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থকে রক্ষা করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল শক্তি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ বাহিনী এবং বেসামরিক আমলারাই আওয়ামী মহাজোটের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, সাইফুল হক, মোশাররফ হোসেন নান্নু, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, হামিদুল হক, ইয়াসিন মিয়া ও অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে সরকারি ফ্যাসিবাদী আচরণের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, গত ৬ জুন ২০১৫ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কতকগুলি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক (এম.ও.ইউ) ও দলিল স্বাক্ষরের বিষয়ে ঐদিন বিকেল ৪.৩০টায় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা দেশবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের আহ্বান করেছিল। ভারতের শাসকগোষ্ঠীর প্রতি একান্ত অনুগত শেখ হাসিনার সরকার গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ওই সমাবেশ হতে না দেয়ার জন্য ৫ জুন রাত ১২টা থেকে ৭ জুন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বর্তমান সমন্বয়কারী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু-কে গৃহবন্দি করে মানসিকসহ নানা উপায়ে হয়রানি করে ও ভয়ভীতি দেখায় এবং তার মোবাইল কেড়ে নেয়। ৬ জুন দুপুরের পর থেকে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কার্যালয় ও মোর্চার শরিক সংগঠন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র কার্যালয় এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দপ্তরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, গোয়েন্দা কর্মকর্তা দিয়ে ঘেরাও করে রাখে। ৬ জুন বিকাল ৪টায় বাসদ (মার্কসবাদী)-র কর্মী শরীফুল চৌধুরী, প্রগতি বর্মন তমা ও সায়েমা আফরোজ-কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতে সোপর্দ করে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও পুলিশ গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। পুলিশি সন্ত্রাসের কারণে বাম মোর্চার পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া প্রেসক্লাবের সামনে থেকে জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি জাফর হোসেন-সহ ৩ জনকে এবং জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা মহিউদ্দিন আহমদসহ ৩ জন নেতাকর্মীকে আটক করে এবং তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করে।
একান্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি ও তাদের সম্মতিতে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্বাক্ষর (এম.ও.ইউ) ও দলিল স্বাক্ষর হয়েছে সে সম্পর্কে বাম মোর্চার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বলা হয়:
১. চুক্তিগুলোর মধ্যে ভারতের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভারতকে ট্রানজিটের নামে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একাধিক পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
২. অথচ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একান্ত জরুরি বিষয় – তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি অমিমাংসিত রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস নিয়েই থাকতে হচ্ছে।
৩. বাংলাদেশের সীমান্তের তিন দিকে ভারতের কাটা তারের বেড়া দেয়া ও সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বিচার হত্যা-নির্যাতন-অপহরণ-ধর্ষণের বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
৪. ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার জন্য কোনো অর্থবহ চুক্তি ও সমঝোতা হয়নি। এর মধ্য দিয়ে ভারতের শাসকগোষ্ঠীর মনোভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
৫. বাংলাদেশ সরকারের আইনকানুন বহির্ভূত ভারতের দুটো কোম্পানি আদানি ও রিলায়েন্স বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির সাথে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি কার্যত বাংলাদেশকে বিদ্যুতের জন্য ভারতের উপর নির্ভরশীল করে ফেলবে। ফলে বাংলাদেশে শিল্প এবং কৃষি মারাত্মক ঝুকির মধ্যে পরবার বিপদ নিহীত আছে।
৬. বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেসকল চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে তা বাস্তবায়নের পূর্বে দেশের জনগনের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে এবং জনগণের সম্মতি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পরবর্তী কর্মসূচি : গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ৬ জুনের সমাবেশ পুলিশ কর্তৃক ভন্ডুল করা ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশুকে গৃহবন্দী করে হয়রানি করা এবং কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী ৯ জুন বিকেল সাড়ে ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।