কৃষি-স্বাস্থ্য-পরিবহন-কর্মসংস্থানসহ জনগনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে ২জুলাই ২০১৫ বিকাল ৪ টায় নগরীতে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য সুশান্ত সিনহার সভাপতিত্বে এবং এডভোকেট উজ্জ্বল রায়ের পরিচালনায় সিলেট সিটি পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র সিলেট জেলার সংগঠক তামান্না আহমেদ,সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় কান্ত দাস, শাবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক অপু কুমার দাশ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল সিটি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে আম্বরখানায় গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে মহজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সমস্ত দাবিকে উপেক্ষা করে গায়ের জোরে দেশি-বিদেশী লুটেরা গোষ্ঠির স্বার্থে ক্ষমতায় টিকে আছে। ‘কম গণতন্ত্র আর বেশি উন্নয়নে’র বুলি আউড়ে জনগনের সমস্ত অধিকারকে বিপন্ন করছে। মধ্য আয়ের দেশ তৈরির কথা বলে মহাজোট সরকার কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিবহনখাতসহ সকল কিছুকে তুলে দিচ্ছে দেশি-বিদেশী পুজিঁপতিদের হাতে। পুঁজিপতিদের মুনাফার কারণে কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, ক্রমাগত লোকসান গুণতে গুণতে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে গ্রামীণ কৃষকরা। দেশের গরীব মানুষদের জন্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলে কিছু না থাকলেও সরকার গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তুলে দিয়েছে বেসরকারি খাতে। আপর দিকে সরকারি হাসপাতাল বলতে যা অবশিষ্ট আছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষাক্ষেত্রে একই চিত্র বর্তমান। ক্রমাগত বেসরকারিকরণ-বানিজ্যিকীকরণ মানুষকে শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে । এর সাথে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ৭.৫ কর কিংবা সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে অরাজকতা শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ চিত্রই তুলে ধরে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্ব গতি, পরিবহন ক্ষেত্রে আরাজকাতা জন জীবনের সংকটের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলেছে। এর সাথে রেলের টিকেট কালোবাজারির হাতে চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারকে এর বিরুদ্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। মহাজোট সরকার নতমস্তকে ভারতের কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে ‘কানেকটিভিটি,’ বিনা শুল্কে ভারতের আরও ২৩টি পণ্যের প্রবেশ, ট্রান্সশিপমেন্টের নামে বাংলাদেশের চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, বিদ্যুৎখাতে চুক্তি সবই করলেন। অথচ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, কিংবা সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকার কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে নি। মোদির এ সফরে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠির নতজানু ভূমিকা বাস্তবে ভারতের পুজিঁপতিদের কাছে আমাদের জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়েছে। আর এই অবস্থায় সরকার সকল ধরণের শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে দেশে চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত করেছে। যে কারণে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশসহ মত প্রকাশের সকল গণতান্ত্রিক রীতিনীতির উপর পুলিশী দমন-পীড়ন প্রতিষ্ঠা করেছে।
বক্তারা দেশের এই সমস্যা-সংকট থেকে উত্তরণের জন্যে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্বে গণআন্দোলন ও পড়ায় পড়ায় সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলার আহবান জানান।