সুন্দরবনের প্রাণ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবি
অনতিবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার আহ্বান
‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক বিকল্প আছে, সুন্দরবনের বিকল্প নাই’ এই বক্তব্য নিয়ে সুন্দরবন ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারি রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবিতে ১৬ অক্টোবর ২০১৫ সকালে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে রোডমার্চ শুরু হয়। মোর্চার পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীরা এই রোডমার্চে অংশগ্রহণ করছেন।
রোডমার্চ শুরুর প্রাক্কালে প্রেসক্লাবের সম্মুখে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এর সভাপতিত্বে এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোঃ শহীদুল্লাহ, সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক আকমল হোসেন, লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, লেখক-গবেষক নুর মুহাম্মদ, প্রকৌশলী বিডি রহমতুল্লাহ, বাম মোর্চার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ (মার্কসবাদী) এর দলের সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মাহবুব) এর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ইয়াসিন মিয়া ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ। সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রকেীশলী মু. ইনামুল হক।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন দেশের মানুষ, ইউনেস্কো, রায়সারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকে উপেক্ষা করে সরকার রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যে সর্বনাশা তৎপরতায় যুক্ত তা সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। প্রধানমন্ত্রী একদিকে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্যা আর্থ’ গ্রহণ করছেন আর অন্যদিকে সুন্দরবন বিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প অব্যাহত রেখেছেন। এখন তার উচিত হবে এই পুরস্কারের মর্যাদা রক্ষায় অনতিবিলম্বে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যাবতীয় তৎপরতা স্থগিত ঘোষণা করা। তা না হলে ভবিষ্যতে এই পুরস্কার তার ও তার সরকারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। তারা বলেন, এমনিতেই সিডর, আইলা, লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরির্তনের কারণে সুন্দরবনসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল মারাত্মকভাবে বিপন্ন। এখন এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হলে তা দেশ ও জনগণের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ও বর্জ্য সমগ্র পরিবেশকে বিপর্যস্ত করবে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে তার মতলববাজ পরামর্শকদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে এসে ভারতের জালিয়াত কোম্পানী ও এনটিপিসির কর্তৃত্বাধীন এই পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, বিনাভোটে নির্বাচিত বলে সরকার যা খুশী তাই করতে পারে না। সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনের বিনিময়ে আমরা কোনভাবেই আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। বক্তারা রোডমার্চ সফল করতে জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
১৬ অক্টোবর বিকালে মানিকগঞ্জে সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চের প্রথম দিনের কর্মসূচী শেষ হবে। রোডমার্চ রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা হয়ে ১৮ অক্টোবর বিকালে বাগেরহাটের কাটাখালিতে সমাপ্তি সমাবেশ ও ঘোষণা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
রোডমার্চ প্রেসক্লাব থেকে যাত্রা শুরু করে শাহাবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরী, কলাবাগান হয়ে শুক্রবাদ থেকে বাসে উঠে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।