রোডমার্চ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ
সরকার দখল করে শাসন করার স্বৈরতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করেছে
২১ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ এবং ৫ নভেম্বর সুন্দরবন রক্ষা সংহতি দিবস
সুন্দরবন রক্ষায় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রোডমার্চ শেষে ২০ অক্টোরব নির্মল সেন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে রোডমার্চের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে কোন উস্কানী ছাড়াই পুলিশের বর্বর ও অমানসিক হামলা-আক্রমণ-লাঠিচার্জে নেতাকর্মীদের আহত করা এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার ঘটনার গ্রহণযোগ্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং হামলাকারী পুলিশ সদস্যদেরকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার ও শাস্তি দাবি করা হয়েছে। বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ বলেন, পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে উপর্যুপরী এই ন্যাক্কারজনক হামলা সরকারের চরম অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণুতা ও স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে দমন করে শাসন করার নীতি গ্রহণ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে বলা হয়, মানিকগঞ্জে রোডমার্চকারী নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ বেপরোয়া হামলা-আক্রমণ চালায়, নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও শর্টগান দিয়ে মারতে থাকে। এখানে অন্যান্যের মধ্যে আহত হন মোর্চার কেন্দ্রীয় নেত্রী গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশুসহ ২০-২৫ জন নেতাকর্মী। ১৭ অক্টোবর সকালে রোডমার্চ মাগুরায় পৌঁছে মিছিল করার চেষ্টা করলে মাগুরা সদর থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ আমাদের উপর যথেচ্ছ হামলা-আক্রমণ-লাঠিচার্জ করে। এখানে আহত হন বাম মোর্চার সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ ১৮-২০ জন নেতাকর্মী। রোড মার্চের পুরো বহরকে তারা সামনে-পিছন থেকে কর্ডন করে আর কোথাও বাস থেকে নামতে না দিয়ে রাস্তায় চলতে বাধ্য করে। ঝিনাইদহে পায়রা চত্বরে নির্ধারিত সমাবেশ ও সমাবেশের পর দুপুরে আমাদের খাবারের কথা থাকলেও শক্তি প্রয়োগ করে ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস দিয়ে রোডমার্চকে যশোরের পথে চলে যেতে বাধ্য করে। যশোর টাউন হল ময়দানে আমাদের পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি, রাতে যশোরে থাকা ও খাবার কথা থাকলেও পুলিশী সন্ত্রাসে এই সবকিছু পণ্ড হয়ে যায়। ফলে ১৭ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫০ জন নারীসহ ৫০০ শতাধিক নেতাকর্মীকে আক্ষরিক অর্থেই অভুক্ত থাকতে হয়। বহরে অংশগ্রহণকারীদেরকে টয়লেট-বাথরুমে পর্যন্ত যেতে দেয়া হয়নি। মাগুরা থেকে যশোরের নোয়াপাড়ার শেষ সীমানা পর্যন্ত পুরো পথেই মনে হয়েছে রোড মার্চের সমগ্র বহরকেই তারা যেন গ্রেফতার করে আতংক ছড়িয়ে অনিশ্চিত গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি প্রায় অবিশ্বাস্য-অকল্পনীয়। এই সমগ্র পথে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও রোডগুলোতে ন্যূনতম ২৫-৩০টি স্থানে বন্দুক আর লাঠিসোঠা হাতে নিয়ে রোডমার্চকে দ্রুত চলে যেতে ইঙ্গিত দেয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে সাদা পোশাকে অসংখ্য ব্যক্তিকে শর্টগান, পিস্তলসহ নানা অস্ত্র উঠিয়ে রোডমার্চের বহরকে হুমকি দিতে দেখা যায়। একে কেবল একটি যুদ্ধ পরিস্থিতির সাথেই তুলনা করা চলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশী হামলা-আক্রমণ মোকাবেলা করে পথে পথে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতায় রোডমার্চ সফল করায় গণমাধ্যমের কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাম মোর্চার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়। বাম মোর্চা আহত সাংবাদিকদের প্রতিও সহমর্মীতা জ্ঞাপন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, বিলম্বে হলেও সরকারের বোধদয় হবে এবং অনতিবিলম্বে আত্মঘাতি রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা প্রদান করা হবে। সংবাদ সম্মেলন থেকে নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।
ক) রোডমার্চ কর্মসূচীতে পুলিশী হামলা, নির্যাতন ও বাধা প্রদানের প্রতিবাদে ২১ অক্টোবর বিকাল ৪টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে বিক্ষোভ সমাবেশ।
খ) আগামী ৫ নভেম্বর দেশব্যাপী ‘সুন্দরবন রক্ষা সংহতি দিবস’ পালিত হবে।
গ) একই দাবিতে জাতীয় সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির ২৯ অক্টোবরের বিক্ষোভ সমাবেশ ও ১৪ নভেম্বর সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় কনভেনশনের প্রতি সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক এবং রোডমার্চের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, মোশরেফা মিশু, জোনায়েদ সাকি, মোশারফ হোসেন নান্নু, ইয়াসিন মিয়া ও হামিদুল হক। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বহ্নিশিখা জামালী, মানস নন্দি, শহীদুল ইসলাম সবুজ, মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, কামরুল আলম সবুজ, উলন রায়, মুখলেছুর রহমান প্রমুখ।