সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুলগুলোতে ভর্তুকি কমিয়ে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল না করলে ভর্তি বর্জন, স্কুল ধর্মঘটসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী দিকে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। ৬ জানুয়ারি সকাল ১১ টায় চসিক মেয়রকে স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি পেশের পূর্বে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন।
সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুলগুলোতে ভর্তুকি কমিয়ে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজকের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তাজনাহার রিপন। সাধারন সম্পাদক আরিফ মঈনুদ্দিনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জোন ইনচার্জ সত্যজিৎ বিশ্বাস, নগর সহ সভাপতি মুক্তা ভট্টচার্য, অর্থ সম্পাদক দীপা মজুমদার, সদস্য মো: সায়েম , জয়তু সুশীল, রাম প্রসাদ দে, প্রণব দে, আয়েন উদ্দিন। সংহতি জ্ঞাপন করেন সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদাউস পপি, বিশিষ্ট আইনজীবী বিশুময় দেব এবং ভুক্তভোগী অভিভাবকবৃন্দ।
সংহতি জানিয়ে বক্তারা বলেন, শিক্ষা মানুষের সংগ্রামের ফল। তাই শিক্ষা সবারই প্রাপ্য অধিকার। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষা ক্রমান্নয়ে ব্যয় বদ্ধির মাধ্যমে মুষ্টিমেয় মানুষের অধিকারে পরিণত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন বৃদ্ধিও মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের সাধারণ গরীব মানুষের শিক্ষা আবারো হুমকির মুখে পড়বে। শিক্ষিত সচেতন শিক্ষানুরাগী মানুষের সক্রিয় আন্দোলনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে হাজার শিক্ষাথীর শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত হতে পারে। এ অংশগ্রহন আজ সময়ের দাবি। ছাত্র নেতারা বলেন, শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ কমছে। শিক্ষাব্যবস্থার ৮০% ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষা আজ মুনাফা লাভের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ভর্তি নীতিমালা থাকলেও এই জানুয়ারি মাসে স্কুল ভর্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি বাণিজ্যেও প্রতিযোগিতা চলে। চট্টগ্রামে সরকারি মাধ্যমিক স্বুল আছে মাত্র ৯টি। সরকারি স্বুলের সংকট ও বেসরকারি স্কুলে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষা ব্যয়ের কারণে এ অঞ্চলের সাধারণ নিম্ন- মধ্যবিত্তের বিশাল জনগোষ্ঠী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চসিক দীর্ঘদিন শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা পালন করে আসছে। শিক্ষা ব্যয় কম হওয়ায় সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের কাছে প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। চসিকে অধীনে মোট ৪৬টি মাধ্যমিক স্কুল, ১৮টি কলেজ ও ছয়টি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার সহ আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৯০হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। সম্প্রতি চসিকের পঞ্চম সাধারন সভায় ঘোষণা করা হয়েছে চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভতুকি কমিয়ে শিক্ষাথীদেও ভতি ফি ও মাসক বেতন ফি বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে স্কুলগুলোতে ফি নির্ধারিত হয়েছে। যা পূবের তুলনায় দ্বিগুণ। এ অনুযায়ি ভর্তি ফি হবে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত ২৫৫০ টাকা, ৯ম- ১০ম শ্রেণি ২৭৪০টাকা। মাসিক বেতন ফি ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১৫০ টাকা, ৭ম-৮ম শ্রেণি ১৬০টাকা, ৯ম-১০ম শ্রেণি ২০০ টাকা। এ সিদ্ধান্তে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন আজ অনিশ্চয়তার মুখে। আমরা জানি একটি সুদক্ষ মানবিক জনগোষ্ঠীর প্রস্তুতের জন্য একমাত্র হাতিয়ার হলো শিক্ষা। আর এ শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ দায়িত্ব ক্রমাগত সংকোচনের কারণে আজ শিক্ষা পাওয়ার অধিকার শুধুমাত্র যার টাকা আছে তার উপরই নির্ভর করছে। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কটি ও আজ পণ্যে পরিণত হয়েছে।
সমাবেশের মাধ্যমে বক্তারা বলেন, শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষা পূর্নাঙ্গ হয় না। বক্তরা করেন বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নির্ধারিত হওয়া উচিত। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের। এই দায়ভার কোন ভাবেই ছাত্রদের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। প্রতিবছর চসিক শিক্ষাখাতে যে ভর্তুকি দেয় তা নাম মাত্র। এ বছর চসিক ১৬৩২ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। নগরবাসীর ট্যাক্স ও সরকারের উন্নয়ন অনুদান থেকেই এ অর্থ আদায় হয়। আমরা দেখি সিটি কর্পোরেশন ৬১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টাইগারপাশে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। পতেঙ্গা সি বীচে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ব্যয় করবে ৩’শত কোটি টাকা। প্রশ্ন হলো দেশের উন্নয়নে কোনটি বেশি প্রয়োজর শিক্ষা পাঁচ তারকা হোটেল আর বিলাশবহুল পর্যটন কেন্দ্র। অথচ আমরা দেখি কর্পোরেশন আইনে আছে শিক্ষার দায়িত্ব পালনে কর্পোরেশন অবশ্য দায়ি থাকবে। নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতিতে মেয়র বলেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা বিস্তারে ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ রেখে শিক্ষা প্রসার ও শিক্ষা উন্নয়নে অতীতের ভূমিকা বলবৎ রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আজ দেয়া প্রতিশ্রুতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে নগরবাসীর শিক্ষা অধিকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পালনের দাবি জানান। সমাবেশ শেষে মিছিল সহযোগে মেয়রকে গণ স্বাক্ষরসহ স্মারক লিপি পেশ করা হয়। অবিলম্বে সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে চট্টগ্রামের সাধারন মানুষ সহ সমাজ সচেতন বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে ভর্তি বর্জন, স্কুল ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে এ আন্দোলন বেগমান করে দাবি আদায়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।