বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নসহ নারী-শিশু নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও বিচার, অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা,মাদক-জুয়া , পর্নোপত্রিকা, ব্লু-ফিল্ম, ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২ টায় ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নসহ নারী-শিশু নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও বিচার, অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা, মাদক-জুয়া, পর্নোপত্রিকা, ব্লু-ফিল্ম, ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে নারী সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও এবং স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় । সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারীমুক্তি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্ত ও সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন। বক্তব্য রাখেন ঢাকা নগর শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুলতানা আক্তার রুবি, চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি পপি চাকমা, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিদীপা ভট্টাচার্য, গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি রোকেয়া খাতুন, দিনাজপুর জেলা শাখার আহবায়ক মাসুমা মাহবুবা, ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহবায়ক সেজঁতি চৌধুরী, বগুড়া জেলা শাখার আহবায়ক নুরজাহান রেখা, সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক তামান্না আহমেদ, রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুন নাহার লিপি।
সমাবেশে সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, একটি সমাজ কতটুকু এগিয়ে তা বুঝা যায় সমাজে নারীরা কতটুকু নিরাপদ তা দেখে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় যে নির্যাতনের চিত্র দেখি তা গা শিউরে ওঠার মত। গত বছরের শেষ সপ্তাহে পত্রিকার পাতায় আসা একটি খবর প্রমাণ করে এদেশের নারী সমাজ কতটা অসহায়। জনগণ নিরাপত্তাহীন আতংকিত জীবন যাপন করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহবান জানাই।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, গত এক বছরে নারীর উপর যে ভয়াবহ শারীরিক-মানসিক-যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তা নজীরবিহীন। বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার বিচার এখনো হয়নি। নড়াইলে গৃহবধূ নির্যাতন, টাঙ্গাইলে মা-ছেলের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন, বখাটেদের মটর সাইকেল চাপায় রুনা আক্তার হত্যা, কেরানীগঞ্জে মীম হত্যার বিচার হয়নি। এমনিভাবে অসংখ্য নারী নির্যাতনের ঘটনায় আমরা শিহরিত হই। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। কোন ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চলছে সেই সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি বন্ধ করে অবলিম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অবক্ষয় শুরু হয়েছে। গ্রামে যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য, মাদক ও জুয়ার আসরে স্বয়ং স্থানীয় প্রশাসন পৃষ্ঠপোষকতা করে, মদদ দেয়। এই অশ্লীল নৃত্য, মাদক ও জুয়ার কারণে কিশোর-তরুণ-যুব সমাজের যে মানসিক বিকৃতি ঘটছে তার বিরুদ্ধে সাধারণ বিবেকবান মানুষদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট, পর্নো পত্রিকা, ব্লুফিল্ম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান হয়।
একই সাথে ২০১৪ সাল থেকে বাংলাশে নারীমুক্তি কেন্দ্র জেলায় জেলায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বাক্ষর সংগ্রহ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, অশ্লীল পোষ্টারে কালি লেপন, পথসভা-হাটসভা, বিক্ষোভ সমাবেশ, ডিসি অফিস-পুলিশ সুপারের কার্যলয় ঘেরাও, নারী সমাবেশ, মতবিনিময় সভা শেষে ৫ দফা দাবিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালিত হয়েছে। পাঁচ দফা দাবিসমূহ হলো-
১. বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নসহ মতিঝিলে এজিবি কলোনীর রুনা হত্যা, কেরানীগঞ্জে মীম হত্যা, গাজীপুরের শ্রীপুরে কলেজ ছাত্রীসহ মাকে হত্যা, নড়াইলে গৃহবধূ ববিতা হত্যা, টাঙ্গাইলে মা-ছেলের উপর বর্বোরোচিত নির্যাতন,শিশু রবিউল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সর্বত্র নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হবে। হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা কার্যকর করতে হবে।
২. অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা বন্ধ করতে হবে। পর্নো পত্রিকা, ব্লু-ফিল্ম, ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধ করতে হবে। নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারী দেহের অশ্লীল উপস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। মাদক ও জুয়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা, ফতোয়াবাজ এবং ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা-কুসংস্কার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে
৪. সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইউনিফরম সিভিল কোড চালু করতে হবে। সিডও সনদের পূর্ণ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. নারীশিক্ষাকে বিস্তৃত ও পূর্নাঙ্গ করতে হবে। নারীর স্বাবলম্বীতার জন্য নারী শিক্ষাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য খেলাধুলা ও আত্মরক্ষামূলক শরীরচর্চা আবশ্যিক করতে হবে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত হোস্টেল নির্মান করতে হবে।