Sunday, November 24, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদতিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে বাসদ (মার্কসবাদী)’র রোডমার্চ

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে বাসদ (মার্কসবাদী)’র রোডমার্চ

12711189_740282639406667_6340666514723477653_o

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর-তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে রোডমার্চ করেছে। দলের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উদ্যোগে এই রোডমার্চ সকাল ১১টায় রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে থেকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে উদ্বোধনী সমাবেশে ব্যানার, ফেন্টুন ও লাল পতাকা নিয়ে শত শত নেতা-কর্মী-সংগঠক সেখানে সমবেত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলা শাখার সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু’র সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শুভাংশু চক্রবর্র্তী, জয়পুরহাট জেলা সমন্বয়ক ওবায়দুল্লাহ মুসা, গাইবান্ধা জেলা আহবায়ক কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদ, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমরেড মঞ্জুর আলম মিঠু, দলের রংপুর জেলা কমিটির সদস্য পলাশ কান্তি নাগ।

উদ্বোধনী সমাবেশের পর রোডমার্চ রংপুর নগরীর প্রধান সড়ক অতিক্রম করে এগিয়ে যায়। যাত্রা পথে সড়কের দুধারে হাজার হাজার মানুষ এই রোডমার্চকে অভিনন্দন জানায়। তিস্তা বাঁচাও-কৃষি ও কৃষক বাঁচাও-দেশ বাঁচাও এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রোডমার্চ রংপুর মেডিকেল মোড়, পাগলাপীর, গঞ্জিপুর, চন্দনের হাট, মাগুড়া, গাড়াগ্রাম, অবিলের বাজারে হয়ে বেলা ৩ টায় বড়ভিটায় পৌছে। যাত্রা পথে উল্লেখিত স্থান সমূহে সংক্ষিপ্ত সামাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক অধ্যাপক তরিকুল আলম, বগুড়া জেলা সমন্বয়ক সামসুল আলম দুলু, কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয়ক মহির উদ্দিন, দিনাজপুর জেলা সমন্বয়ক রেজাউল ইসলাম সবুজ, ঠাকুরগাঁ জেলা সমন্বয়ক মাহবুব আলম রুবেল প্রমুখ। দুপুরে বড়ভিটায় দুপুরের আহার গ্রহণ শেষে বিন্নাকুরী, বড়ঘাট হয়ে জলঢাকার জিরো পয়েন্ট সমাপনী সমাবেশ মিলিত হয়।

সমাবেশের পূর্বে সেখানে ভারতের এই পানি আগ্রাসন ও সরকারের নতজানু ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন রোডমার্চে অংশগ্রহণকারী চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা।

সেখানে সমাপনী সমাবেশে দলের নীলফামারী জেলা সংগঠক তরণী মোহন রায়ের সভাপতিত্বে ও আহসানুল আরেফিন তিতুর পরিচালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

12717314_740282642740000_8514000183031877061_nপ্রধান বক্তা কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি লংঘন করে ভারত কর্তৃক উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তাকে শুকিয়ে মারছে। গত তিন বছরে ৩ জেলার ১২ উপজেলার কৃষক-ক্ষেতমজুর ও কৃষি জমি চরম বিপর্যয়ের মুখে। হাজার হাজার মৎস্যজীবী ও মাঝি পরিবার বেকার কৃষক-জনতার মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হাহাকার।

বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে তিস্তায় একসময় শুল্ক মৌসুমে ১৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো। ভারতের (গজলডোবা ব্যারেজ) পানি প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ অংশে তা কম ৪ হাজার কিউসেকে দাঁড়ায়। খরা মৌসুমে তা ২৫০-৩০০ কিউসেকে নেমে এসেছে। বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বগুড়া জেলার সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হয়। যার সেচ লক্ষ্যমাত্রা ৭,৫০,০০০ হেক্টর হলেও সেচ সুবিধা দেওয়া যেত ১,১১,৪৬০ হেক্টর জমিতে। ভারতের কাছে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যর্থতার এমন ভয়াবহ পরিণতি যে, চলতি মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

তিস্তার পানি না পাওয়ায় প্রতিবছর ফসলহানীর কারণে সর্বশান্ত হচ্ছে কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি সহায়তা না পেয়ে মহাজনী ও এনজিও ঋণের দারস্থ হয়। এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে মধ্যচাষী জমিজমা বিক্রি করে গরীব ক্ষেতমজুর, দিনমজুরে পরিণত হয়। তিস্তার গজলডোবা বাঁধ একদিকে শুল্ক মৌসুমে শুকিয়ে মারে আবার বর্ষা মৌসুমে প্রবল পানির স্্েরাত ফসল-বাড়ীঘর ডুবিয়ে মারে। ফসলী জমি বালু চরে পরিণত হয়। নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হয় মানুষ।

তিনি আরো বলেন, আমাদের শাসকগোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় হয়নি বরং সকল সরকারই ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের স্বার্থে একের পর এক গণবিরোধী চুক্তি করেছে। শুধু তিস্তা নয় দু’’দেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫১ টি নদীতে আন্তর্জাতিক নদী আইন অম্যান্য করে ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উজানে অসংখ্য বাঁধ, ব্যারেজ দিয়ে এবং ভিন্নখাতে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের কারনে মরুকরনের দিকে গোটা বাংলাদেশ।

তিনি, ভারতের পানি আগ্রাসন ও সরকারের নতজানু নীতির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপুরণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।

রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশ থেকে মার্চ মাস জুড়ে মিছিল, সমাবেশ, মানব বন্ধন, মতবিনিময় শেষে আগামী ৭ এপ্রিল রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments