সারাদেশে গ্রেফতার ২৮, পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত শতাধিক আগামীকাল সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আজ ২৫ এপ্রিল ২০১৬, সোমবার প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের ডাকে তনুসহ অব্যাহত গুম-খুন-ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল পালিত। হরতাল পালনকালে বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগ ও পুলিশী হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয় এবং পুলিশ ২৮ জনকে গ্রেফতার করে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হামলা ও আটকের তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রতিবাদে আগামীকাল সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেন।
হরতাল পালনকালে রংপুরে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্র ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক প্রত্যয়ী মিজান, রংপুর সরকারি কলেজের সভাপতি আসিফ সাজু ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সাধারন সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন গুরুতরভাবে আহত হয়। তাঁদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বরিশালে ছাত্র জোটের নেতা নবীন আহমেদ, নয়ন, এবি সিদ্দিক, নীলিমা জাহান ও শিক্ষার্থী তৃষাসহ অর্ধশতাধিক এবং জাবি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জয়পুরহাট, লক্ষীপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়া, গাজীপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও জামালপুরে পুলিশী হামলায় আরো অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সকাল ৬ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্ত্বর থেকে মিছিল শুরু করে শাহবাগ ও পল্টন মোড়ে আবস্থান নেয়। ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন বিশ্বািবদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, সূত্রাপুর, মিরপুর-১ ও ১০, ধানমন্ডি, মৌচাক মোড়সহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় এবং খন্ড খন্ড মিছিল করে।
বেলা ১১ টায় শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সোহেলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ফয়সাল মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সালমান রহমান, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক বিপ্লব বিলাশ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর যুগ্মআহ্বায়ক ইকবাল কবীর, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা, ছাত্র ঐক্য ফোরামের আনিকা তাসনীম মিতুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভ।
সভাপতির বক্তব্যে আশরাফুল আলম সোহেল বলেন, তনুকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে, বাঁশখালিতে গুলি করে ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে, রাবিতে শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, পাহাড়-সমতলে গুম-খুন-ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে কিন্তু কোন ধর্ষক বা খুনীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেনি এই আইনী ও বিচারব্যবস্থা। ফলে বর্তমান আইন, বিচারব্যবস্থা এবং সরকারের প্রতি কোন আস্থা নেই মানুষের। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং মানুষের নিরাপত্তার দাবিতে আমাদের হরতালে সর্বস্তরের জনগণের সমর্থন এবং অংশগ্রহণই প্রমাণ করে এই অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শাসন জনগণ মানতে পারছেন না।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে আটককৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার খুনী-ধর্ষক-লুটেরাদের তোষণ করে এমন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে শিশু-নারী, ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক কেউই নিরাপদ নন। ক্যান্টনমেন্ট, মায়ের পেট, বেডরুম, সীমান্ত কোথাও নিরাপত্তা নেই। সরকার নিরাপত্তা দিতে যখন ব্যর্থ তখন জনগণকেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। লুটেরা-খুনী-ধর্ষকদের মদদদাতা সরকার নয় নিপীড়িত জনগণের পক্ষের সরকার ও রাষ্ট্র কায়েমের সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।
আগামীকালের সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে