সদ্যপ্রয়াত বাসদ (মার্কসবাদী) রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সমন্বয়ক বোধিসত্ত্ব চাকমার স্মরণে এক শোকসভা ২৭ মে বিকাল ৬টায় তোপখানা রোডস্থ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন ও মূল বক্তব্য রাখেন পার্টি সাাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড্স মানস নন্দী, উজ্জ্বল রায়, মঞ্জুরা হক নীলা।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বোধিসত্ত্ব চাকমা ছিলেন সংহত ব্যক্তিত্বের অধিকারী। মানুষ যখন আদর্শের প্রতি নিজেকে নিবেদিত করে অনুশীলনে ব্রতী হয়, তখন ব্যক্তিত্বের মধ্যে তার ছাপ ফুটে ওঠে। নিপীড়িত মানুষের প্রতি ভালোবাসা, তাদের দুঃখ-কষ্টের কার্যকারণ উপলব্ধি একদিন বোধিসত্ত্বকে মার্কসবাদী বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। পার্বত্য এলাকায় শাসকশ্রেণীর দীর্ঘদিনের অত্যাচার-নিপীড়ন, তার পাল্টা হিসেবে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র লড়াই চলাকালীন জটিল পরিস্থিতিতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর একজন হয়ে মার্কসবাদী বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া সহজ বিষয় ছিল না। তিনি ১৯৯২ সালে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রাঙ্গামাটি কলেজ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি হওয়ার পর পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা বিভাজন, শাসকশ্রেণীর মদদে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সাম্প্রদায়িক উস্কানি চলতে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও জনসংহতি সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও পার্টির সাথে আদর্শগত সম্পর্কে ছেদ ঘটেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে সবসময় পার্টির সাথে দৃষ্টিভঙ্গি-মূল্যায়ন বিনিময় করেছেন। পরবর্তীতে শাসকগোষ্ঠীর উস্কানিতে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত আরো জটিল রূপ নিলে রাজনীতির সে পথটির আভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে তার প্রশ্ন তৈরি হয়। জাতি সমস্যা সমাধানের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে – এসব প্রশ্ন ও অনুসন্ধানের পথ পরিক্রমায় আঞ্চলিক সংগঠনে নিস্ক্রিয় হয়ে পুনরায় পার্টি রাজনীতিতে সক্রিয় হন ২০১১ সাল থেকে। ২০১৩ সালে দলের অভ্যন্তরে মতবাদিক সংগ্রাম চলাকালে পার্টির তৎকালীন নেতৃত্বের শোধনবাদী অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষ চিন্তাধারার ভিত্তিতে দলের আদর্শিক অবস্থানের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে পার্টি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সমন্বয়কের দায়িত্ব নেন। এই দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় আমাদের মত দলের দায়িত্ব নেয়া, ক্রমাগত নিজেকে প্রস্তুত করা যথার্থ রাজনৈতিক উপলব্ধির গভীরতা ছাড়া সম্ভব ছিল না।”
তিনি আরো বলেন, “বোধিসত্ত্ব স্পষ্টভাবে বুঝেছিলেন – বিদ্যমান ব্যক্তিমালিকানাধীন সমাজব্যবস্থা মানুষের মধ্যে নানা ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনোভাব ও সংস্কৃতির যে পরিমন্ডল গড়ে তোলে, তাকে মোকাবেলা করতে হলে সমষ্টি তথা পার্টিস্বার্থের সাথে নিজেকে একাত্ম করতে হয়। শুধু ঐকান্তিক ইচ্ছা ও সততা দিয়ে এটি সম্ভব নয়। এ কঠিন কাজটি সঠিক পথে অনুশীলনের মধ্য দিয়ে রপ্ত করতে হয়। বোধিসত্ত্ব এ সংগ্রামের একজন অনুধ্যানী ছাত্র ছিলেন। সৌম্য শান্ত অথচ দৃঢ় মনোভাবাপন্ন বোধিসত্ত্বর ব্যক্তিগত গুণের আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেক কমরেড নিজেকে এই সংগ্রামে নিবিড়ভাবে নিবেদিত করার মাধ্যমেই সত্যিকার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন সম্ভব হবে। তার মৃত্যুতে যে বড় ক্ষতি হলো সকলের সম্মিলিত সংগ্রামে তা পূরণ করা হোক আমাদের ব্রত।”
কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গাওয়ার মাধ্যমে স্মরণ সভা সমাপ্ত হয়।