সারাদেশে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। নারী শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতা মাত্রা ছাড়িয়েছে বহুপূর্বেই। গত বছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি এখনও। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই নারী নির্যাতনের হার বেড়ে চলেছে আশংকাজনকভাবে। চার মাস আগে কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে সোহাগী জাহান তনু । মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভের বিন্দুমাত্র পরোয়া করেনি আমাদের সরকার ও তার প্রশাসন। পরপর দুবার ময়না তদন্ত করা হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত রিপোর্ট। উল্টো জীবনণাশের হুমকি মাথায় নিয়ে দিন যাপন করছে তনুর বাবা মা ও পরিবার। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটির প্রধানকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। ফলে বিচার পাওয়ার আশা বাস্তবেই সুদূর পরাহত। আর দেশের সার্বিক আইন শৃংখলাসহ অন্যান্য পরিস্থিতিও ভয়াবহ।
সারাদেশে একের পর এক লেখক-প্রকাশক-শিক্ষক, ব্লগার, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের যাজক-পুরোহিত, শিয়া-আহমদিয়া-বাহাই-সুফী হত্যা হচ্ছে। হত্যা, গুম, খুন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দমন পীড়ণ বেড়েই চলেছে। কোথাও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চার বিন্দুমাত্র আভাস নেই। এই সবকিছুর সুযোগে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
সরকার জোর গলায় অস্বীকার করছে দেশে আইএস নেই — বরং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন করতে সব কিছুই বিরোধীদের কাজ। গত ১লা জুলাই গুলশানের মত সুরক্ষিত কুটনৈতিক এলাকায় বিপুল অস্ত্র-বোমাসহ সন্ত্রাসীদের তান্ডব , শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতে বোমা হামলা প্রমাণ করে সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে কতটুকু ব্যর্থ।
মৌলবাদের এই ঊত্থানের পেছনে বুর্জোয়া দলগুলোই দায়ী। আওয়ামীলীগ, বিএনপি উভয় দলই ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে মসৃন করতে, জনগণের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তা গড়ে উঠার প্রক্রিয়াকে দমন করতে এই শক্তিকে মদদ জুগিয়েছে। সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে চলছে উন্মাদনা। ইন্টারনেটে পর্ণোগ্রাফীর ছড়াছড়ি শিশু-কিশোর-যুব সমাজকে নিমজ্জিত করছে এক অন্ধকার জগতে। মদ-জুয়া হাতের নাগালে। ফলে নেশায় বুদ হয়ে বেকার যুবসমাজ জীবনের গ্লানি ভুলতে চেষ্টা করছে। দেশের যখন এই পরিস্থিতি তখন নারী ও শিশুর নিরাপত্তা কতটুকু ভয়াবহ তা কল্পনার বাইরে। অর্থলোভী মালিকগোষ্ঠী আজ দেশকে নরকে পরিণত করেছে। এই পরিস্থিতিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই। মৌলবাদ, ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করার মধ্য দিয়েই আজকে গণআন্দোলন, নারী আন্দোলন গড়ে তোলার পথ রচিত হবে।
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত ৫ দফা দাবী ভিত্তিক ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৩শে জুলাই ২০১৬ “অবস্থান কর্মসূচী” তে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের কেন্দ্রিয় সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুনের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন , কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিদীপা ভট্টাচার্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রিয় অর্থ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার বিউটি।