Sunday, November 24, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - আগষ্ট ২০১৬রামপাল চুক্তি বাতিল ও সুন্দরবন রক্ষার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি হামলা

রামপাল চুক্তি বাতিল ও সুন্দরবন রক্ষার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি হামলা

13879211_1137027066358749_3105960641881421459_n

রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী ও দেশধ্বংসী সকল চুক্তি বাতিল এবং বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আহুত বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ হামলা ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় পুলিশি হামলায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক শরিফুল চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার সরকার, অর্থ সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার, ইডেন কলেজ শাখার সংগঠক লুবাইনা আন্নি, ঢাকা নগর শাখার সদস্য অরূপ দাশ শ্যাম, রহিম ফারায়েজি, আঁখি আক্তার, মাগফুরা জেরিন, ফারুক হাসানসহ জাতীয় কমিটির অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ৬ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সকাল ১১টায় প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি জাতীয় উদ্যান ও শিশু পার্কের সামনে দু দুটি ব্যারিকেড অতিক্রম করে শাহবাগ হয়ে পরীবাগ পৌঁছালে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

দেশের জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন ধ্বংস করতে সরকার জনসাধারণের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও সকল মতামত উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে ভারতের এনটিপিসি কোম্পানির সাথে চুক্তি করে রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভয়াবহতা তুলে ধরে সারাদেশের মানুষের মধ্যে মতামত তৈরী করে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু মহাজোট সরকার কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দেশের স্বার্থ সম্পূর্ণ জলাঞ্জলী দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় সদা তৎপর ভূমিকা পালন করছে। দেশের মধ্যে যেন কোনো ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে এই জন্য সরকার ফ্যাসিস্ট কায়দায় এ সকল প্রতিবাদ কর্মসূচী দমন করছে।

সকালে প্রেসক্লাবের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ, বাসদ (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সিপিবি’র রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ প্রমুখ।

মিছিল শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিখিত খোলা চিঠি পাঠ করে শোনান জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, যে ভারতীয় এনটিপিসি বাংলাদেশে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চাচ্ছে, সেই ভারতেরই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ‘ইআইএ গাইড লাইন, ২০১০’ এ স্পষ্ট বলা আছে- নগর, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকা ইত্যাদির ২৫ কি.মি সীমার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এড়িয়ে চলতে হবে। অর্থাৎ ভারতীয় বিভিনড়ব প্রতিষ্ঠান মিলে সুন্দরবনের ঘাড়ে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে তা ভারতের আইনে অবৈধ। সেজন্য ভারতের সজাগ মানুষও ক্রমে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন।

১৪ কি.মি দূরত্বসীমা যে মোটেই নিরাপদ কোনো দূরত্ব সীমা নয়, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করলেও স্পষ্ট বোঝা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফায়েত্তি কাউন্টিতে ১৯৭৯-৮০ সালে ১২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয় মানুষকে আশ্বস্ত করা হয়েছিলো। পেকান বৃক্ষগুলো (একধরনের শক্ত বাদাম, কাজু বাদামের মতো) যখন একে একে মরতে শুরু করলো ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের হিসেবে ফায়েত্তি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নি:সৃত বিভিনড়ব বিষাক্ত গ্যাস বিশেষত সালফার ডাই অক্সাইডের বিষক্রিয়ায় পেকান, এলম, ওক সহ বিভিনড়ব জাতের গাছ আক্রান্ত হয়েছে, বহু পেকান বাগান ধ্বংস হয়েছে এবং এই ক্ষতিকর প্রভাব কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এমনকি ৪৮ কিঃমিঃ দূরেও পৌঁছে গেছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে ৪৭ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা পুড়িয়ে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। এই ফ্লাই অ্যাশ, বটম অ্যাশ, তরল ঘনীভূত ছাই ইত্যাদি ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করে কারণ এতে আর্সেনিক ও বিভিন্ন ভারী ধাতু যেমন পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, বেরিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকে। এর ফলে সুন্দরবনের পশুপাখি বৃক্ষ লতাপাতাসহ অসংখ্য প্রাণ এবং ইকো সিস্টেম ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই অবিলম্বে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান এবং একই সাথে হামলায় জড়িত দায়ি পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন। তিনি দেশের সচেতন জনসাধারণকে সুন্দরবন ধ্বংসসহ মহাজোট সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সাম্যবাদ আগষ্ট ২০১৬

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments